তীব্র শীতে প্রতিবন্ধীকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :
মুখ থেকে গাড়ির স্টার্ট উঠিয়ে একটি সুপারী গাছে থাপড়ে বাসের হেলপারের মতোই ডাক দিতে থাকে। আর বলতে থাকে ক্লাব, মোল্লারহাট, নৈকাঠি, ফেরিঘাট। যাবেন? যাবেন? তাইলে ওঠেন। আশপাশে কোন লোক না থাকলেও এভাবেই সে ডাকতে থাকে। প্লাস্টিকের বোতল কেটে একটি গাছের সাথে লটকিয়ে আজানের ধ্বনি উচ্চারণ করে। সে একা একা নামাজও পড়েন। যখন যা ইচ্ছে তখনই এভাবে করতে করতে থাকে।
মো. আরাফাত হোসেনের ১১ বছর বয়স হলেও তার নেই কোন বিবেচনা শক্তি। জন্মের পর ৪বছর বয়স থেকে তার শারিরীক ও মানসিক অবস্থা অস্বাভাবিক ধরা পড়ে। পিতা আফজাল হোসেন। সেও দিনমজুর। মা গৃহিনী রহিমা বেগমও শারিরীক ও মানসিক পুরোপুরি সুস্থ নন। জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরা কাঠের ঘরে প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দিনমজুর আফজাল হোসেন।
রহিমা বেগম জানান, ছেলে আরাফাত হোসেন ছোট্টকাল থেকেই অসুস্থ। তাকে নিয়ে অনেক বিপদে আছি। সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয়। বর্ষা এলে বৃষ্টিতে ভিজি এবং শীত আসলে ছালা (চট) মুড়িয়ে রাত কাটাই। ভাঙাচোরা ঘরে কোনভাবেই মানুষ হিসেবে থাকতে পারছি না। শুনছি অসহায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর ঘর পায়, আর মোরা প্রতিবন্ধী পোলাডারে লইয়া কস্টে থাহি।
পরিবারের সাথে কথা বলে জানাগেছে, আফজাল হোসেন উঠতি বয়স থেকে শ্রম বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন। তার বয়সও ৫০বছরের বেশি হয়েছে। দীর্ঘ বছর শারিরীক পরিশ্রমের কারণে এখন বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। শরীরে বাসা বেধেছে নানান ধরনের রোগ-ব্যাধী। এখন একদিন শ্রমবিক্রি করলে দুই দিনে আর কাজ করতে পারেন না। যখন বেশি পরিশ্রম করতে পারতেন তখন জমানো টাকা দিয়ে টিন কাঠের ঘর তুলে মাথা গোজার ঠাই করে নিয়েছেন। বর্তমানে তার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। ঘরের টিন ও বেড়া ভেঙে খসে খসে পড়ছে। সংস্কার করানোর মতো তার কোন আর্থিক অবস্থা নেই। তীব্র শীতে প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে চরম মানবেতন জীবন যাপন করছেন। আফজাল হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে। পাশ্ববর্তি শুক্তাগড় গ্রামের সীমান্তবর্তি হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও মারাত্মক অনুন্নত।
আফজাল হোসেন জানান, যহোন মানসের বাড়ি কাম করতে পারতাম তহোন টাকা পয়সা পাইতাম। সেই টাকা দিয়া একটু ঘর উঠাইছি। এহোন বয়স হইছে, আগের মতো কামও করতে পারি না। ঘরটাও ভাইঙা গেছে, টাকা নাই মিস্ত্রি দিয়া হারাইতেও পারি না। কত কষ্টে থাকতে হয় হেয়া কইতে পারি না। যদি ভালোভাবে মাথা গোজার একটু ঠাই পাইতাম, তাহলে অন্তত প্রতিবন্ধী পোলাডারে লইয়া ভালোভাবে থাকতে পারতাম।