তরুণীর পেটে কাঁচি
শফিকুল খান জনি,(ফরিদপুর):
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণীর অস্ত্রোপচারের পর পেটের মধ্যেই কাঁচি রেখে সেলাই করে দেওয়ার ৬৪৩ দিন পর অপসারণের ঘটনায় ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান ও আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বুধবার এ নোটিশ পাঠান।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফরিদপুরের সিভিল সার্জন, ফরিদুপরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজ হসপিটালের পরিচালক, সার্জারি ইউনিটের অধ্যাপক ড. রতন কুমার সাহা, রেজিস্ট্রার ডা.সালেহ মো.সৌরভ এবং সার্জারি বিভাগ ইউনিট ২–এর ডা. সরফউদ্দিন বরাবরে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
পরে শাহীনুজ্জামান বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং তাদের অবহেলার কারণে ভিকটিমকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে। দৈনিক প্রথম আলোর গত ১১ ডিসেম্বরের ‘পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ৬৪৩ দিন পর অপসারণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণীকে অস্ত্রোপচার শেষে পেটের মধ্যেই কাঁচি রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালের ৩ মার্চ।
ওই ঘটনার ৬৪৩ দিন পর গত শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ওই হাসপাতালেই পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তরুণীর পেট থেকে আনুমানিক ছয় ইঞ্চি লম্বা আকৃতির ওই কাঁচি বের করা হয়। ওই তরুণীর নাম মনিরা খাতুন (১৯)। তিনি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে। দুই ভাই ও দুই বোনের মনে মনিরা তৃতীয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওই হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি করা হবে। কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৩ মার্চ ওই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ইউনিট ২–এর সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিনের অধীন ভর্তি ও অস্ত্রোপচার করা হয় মনিরার। তরুণীটি মেজিনট্রিক ফিস্টজনিত (রক্তের দলা) সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই সময় তরুণীর পেটের মধ্যে চিকিৎসকদের অজ্ঞাতসারে ছয় ইঞ্চি লম্বা মিডিয়াম সাইজ অর্টারি ফরসেপ রেখে সেলাই করা হয়।
মনিরার ভাই মো. কাইয়ুম জানান, অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পরই মনিরাকে ফরিদুপরের নগরকান্দা উপজেলার পৈলানপট্টি গ্রামে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর তিনি পেটের ব্যথা অনুভব করেন। একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে মনিরার পেটের বাচ্চা নষ্ট হলে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। এরপর বিভিন্ন পল্লিচিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তার পেটের ব্যথা কমেনি।
ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে প্রায় দুই বছর চেপে রাখেন ব্যথা। দুই দিন আগে তার পেটে অসহনীয় ব্যথা উঠলে মুকসুদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। ওই ক্লিনিকে এক্সরের মাধ্যমে চিকিৎসক দেখতে পান, মনিরার পেটে একটি কাঁচি রয়েছে। গত শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) মনিরাকে ফরিদপুর নিয়ে আসা হয়। সেখানে এসে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আবার এক্স–রে করা হলে ওই একই প্রতিবেদন আসে।
এরপর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মনিরার অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে অংশ নেন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিন ও রেজিস্ট্রার সালেহ মো. সৌরভ। তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে মনিরার পেট থেকে কাঁচিটি বের করা হয়।
এমএফ