ব্যাংকের পদসোপান ও বেতন-ভাতার সামঞ্জস্যতা সময়ের দাবী
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সময়ের ঈপ্সিত পেশা হিসেবে অনেক পেশার সঙ্গে ব্যাংকিংও শীর্ষে উঠে এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠেছে পরিপূর্ণ ও কাঠামোবদ্ধ একটি পেশা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে, কোনো একটি পেশার ভালো-মন্দ কিছু মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে, যেমন কর্মপরিবেশ, বেতন কাঠামো, পদোন্নতির সুযোগ, চাকরির সন্তষ্টি ও নিরাপত্তা, কর্মিবান্ধব করপোরেট কালচার, সামাজিক মর্যাদা, কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা প্রভৃতি। এসব মানদণ্ডের অধিকাংশই ব্যাংকের চাকরিতে বিদ্যমান। তাই ব্যাংকিং পেশা এখন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে ব্যাংক খাতের জাতীয়করণ থেকে শুরু করে ১৯৮২ সালের শেষ দিকে প্রথম বেসরকারি ব্যাংকের যাত্রা। ১৯৯১ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রণয়ন; ২০০৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর; ২০০৯ সালে ভূতপূর্ব বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্পঋণ সংস্থাকে একীভূত করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড গঠন; একই সালে ইসলামী ব্যাংকিং গাইডলাইন প্রকাশ, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন এবং ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের হরেক রকম বিধি-বিধান প্রণয়নসহ নানা পরিবর্তন এসেছে দেশের ব্যাংক খাতে। কিন্তু এসব পরিবর্তন ও আইনি নির্দেশনার কোনোটিতেই ব্যাংকারের স্বার্থ নিয়ে খুব একটা আলোচনা বা নির্দেশনা নেই বললেই চলে।
দেশের মোট ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের সংখ্যা নয়টি। বেসরকারি ব্যাংক ৪২টি। আর বিদেশি ব্যাংক নয়টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে এসব ব্যাংকে ২০১৭ সালের শেষে এক লাখ ২০ হাজার ব্যাংকার কর্মরত (সূত্র: বণিক বার্তা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮)। কিন্তু সম্মিলিতভাবে পুরো ব্যাংক খাত বিবেচনায় কোন গ্রেডে কতজন করে ব্যাংকার আছেন, এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা দুরূহ ব্যাপার। বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকারদের পদবির নামকরণে ভিন্নতার কারণেই তা সম্ভব নয়।
ব্যাংকের চাকরিতে অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাংকারদের জন্য ওপরে ওঠার অনেক সুযোগ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাংক সুইচ করতে পারা মানেই হচ্ছে এক গ্রেড ওপরে উঠে যাওয়া, সেইসঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেতন ও আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়া। কিন্তু অন্য ব্যাংক থেকে কোনো অফার এলে তখন ব্যাংকারকে দেখতে হয়, প্রস্তাবিত গ্রেডটি তার বর্তমান গ্রেডের ঊর্ধ্বের কিনা। ব্যাংক হয়তো উচ্চতর একটি গ্রেডই অফার করলে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নতুন ব্যাংকের প্রস্তাবিত গ্রেডের নাম (যে গ্রেডে ব্যাংকার প্রমোটেড হতে যাচ্ছে) এবং বর্তমান ব্যাংকের গ্রেডের নাম (যে গ্রেড ছাড়তে চাচ্ছে) একই। ফলে ব্যাংক সুইচ করে আর্থিকভাবে লাভবান হলেও এবং সত্যিকার অর্থেই পদোন্নতি পেলেও গ্রেডের নামটি অভিন্ন হওয়ার কারণে প্রমোটেড হয়েও মনে হয় ‘আগের গ্রেডেই তো থেকে গেলাম!’ একই নামের গ্রেডে আরও কয়েক বছর চাকরি করতে হবে, এমনটা মনে হওয়ার কারণে এই পদোন্নতি ব্যাংকারকে আসলে মানসিকভাবে এগিয়ে নিতে পারে না।
অন্যদিকে এই একই কারণে সাধারণ মানুষও কোনো একটি বেসরকারি ব্যাংকে একজন ব্যাংকারের পদোন্নতির ক্রম (Hierarchical) বা অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে না, যেমনটা পারে একজন সরকারি ব্যাংকারের ক্ষেত্রে। আসলে দেশে এতগুলো বেসরকারি ব্যাংক, কিন্তু একেক ব্যাংকে কর্মকর্তা বা নির্বাহী ব্যাংকারদের পদবি (Designations) একেক রকম। যেমন, ‘প্রবেশনারি অফিসার’ কিংবা ‘ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার’দের চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর তাদের বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন নামে, যেমন অফিসার, সিনিয়র অফিসার, ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, এক্সিকিউটিভ অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপল অফিসার প্রভৃতি বিভিন্ন নামে পদায়ন করা হয়। আবার পদবির নাম বিবেচনায় কোনো কোনো ব্যাংকের একটি সিনিয়র পদ, অন্য ব্যাংকের জন্য জুনিয়র পদ।