পঞ্চগড়ে নারী মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক পতাকা বিতরণ
মোঃ লিহাজ উদ্দিন, (পঞ্চগড়) :
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগম। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে পতাকা বিতরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্পও শোনাচ্ছেন।
গত কয়েকদিন থেকেই রোকেয়া বেগমের এ কার্যক্রম চললেও মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজ শুরু করেন।
এদিন পঞ্চগড় প্রাইমারী টিচার ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। এসময় তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন লাল সবুজের পতাকা। শোনান মুক্তিযুদ্ধের গল্প।
এতে উপস্থিত ছিলেন- জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রেজিয়া ইসলাম, পিটিআই’র সুপারিন্টেনডেন্ট মনসুর আলম, ইন্সট্রাক্টর সুব্রত রায়, মাতিন মাহমুদ, বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ শামীম আরা প্রমুখ।
এর আগে, গত মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উপলক্ষে এই কার্যক্রম শুরু করেছিলেন রোকেয়া বেগম।
বীরমুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগমের বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মুনিগছ এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত- আব্দুর রহিম। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সেসময় রোকেয়া বেগম আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতেন।রোকেয়া বেগম জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এছাড়া যারা মহান বিজয় দিবসের দিন পতাকা ও ফেস্টুন নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে যেতে পারে না, যাদের পতাকা কেনার সামর্থ্য নেই তাদেরকে নিজ উদ্দ্যেগে জাতীয় পতাকা, ফেস্টুন ও মাস্ক বিতরণ করছেন। এদিকে জাতীয় পতাকা ও ফেস্টুন পেয়ে আনন্দে উল্লাসিত শিশুরা। শিশুরা বলে, আমরা বীরমুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগমের কাছে আজ মুক্তিযু্দ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবন কাহিনী জানতে পারলাম। তিনি আমাদেরকে পতাকা ও ফেস্টুন দিয়েছেন। আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমরা এই পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় দিবস পালন করব।
মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগম বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। সেসময় একজন নারী হয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছর পরে এসে দেখছি নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। অনেকেই আছে পতাকা কেনার সামর্থ্য নেই। তাই আমি উদ্দ্যেগ নিয়েছি জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযু্দ্ধের গল্প শোনাব এবং জাতীয় পতাকা ও ফেস্টুন বিতরণ করবো।
জেলা মহিলা আ.লীগের সভাপতি রেজিয়া ইসলাম বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগম আমাদের পঞ্চগড়ের নারীদের গর্ব ও অহংকার। তিনি যে উদ্দ্যেগ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এমন উদ্দ্যেগ আমাদের নতুন প্রজন্মসহ আমরাও স্বাধীনতার ইতিহাস নতুন করে জানতে পারছি।