ফ্রিডম পার্টির নেতা পেলেন নৌকা !
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় ফ্রিডম পার্টির চিহ্নিত নেতা আব্দুল হক আবুকে ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। ফ্রিডম পার্টি থেকে আসা এই নেতাকে নৌকার মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। তারপরও তাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়ায় নেতাকর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ।
জানা যায়, ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে আদমদীঘিতে ফ্রিডম পার্টিকে সু-সংগঠিত করতে নিজ বাড়িতে কার্যালয় বানিয়ে উপজেলা ফ্রিডম পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন আব্দুল হক আবু। এরপর তিনি দল বদল করে ১৯৯৪ সালের দিকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। ছাতিয়ানগ্রাম ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে তিনি ২০১৬ সালের ২৮মে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর হাত ধরে সান্তাহার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের হার্ভে স্কুল এলাকায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। যদিও তিনি উপজেলা ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ছোট আখিড়া গ্রামের বাসিন্দা। আওয়ামী লীগে যোগ দিতে বাধাগ্রস্ত যেন না হোন এজন্য তিনি কৌশলে উপজেলা ও ছাতিয়ানগ্রামে যোগদান না করে সান্তাহারে যোগদান করেন। এরপর সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন দেন। শুধু তাই নয়, এরপর তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ দেয়া হয়। তবে বর্তমানে দলে তার কোনো পদ নেই।
জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর স্থানীয় নেতাকর্মীদের লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আব্দুর হক আবুর নেতৃত্বে ফ্রিডম পার্টির সান্তাহার ও নওগাঁর নেতাকর্মীরা যৌথভাবে তৎকালীন সান্তাহার কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে (চম্পা-পান্না) খুন করার উদ্দেশে একটি সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করেন। সে সময় ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে ফ্রিডম পার্টির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সেই ক্ষোভে ছাত্রলীগ নেতারা আব্দুল হক আবুর বাড়িতে অবস্থিত ফ্রিডম পার্টির অফিস ভাঙচুর করে। হঠাৎ আব্দুল হক আবুর উত্থান দেখে বিস্মিত হয়েছেন ত্যাগী নেতারা।
আভিযোগ প্রসঙ্গে ছাতিয়ানগ্রাম ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী আব্দুল হক আবু জানান, আমার জনপ্রিয়তায় ঈষান্বিত হয়ে একটি মহল এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি কোনদিনই ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবে হ্যাঁ জাতীয় পার্টি করতাম।
সান্তাহার পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী বলেন, ফ্রিডম পার্টি করা নেতাদের যেখানে দলে যোগদান করানো নিষেধ সেখানে তাকে কিভাবে মনোনয়ন দেয়া হয় আমার বোধগম্য নয়।
আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম চম্পা বলেন, আব্দুল হক আবু ফ্রিডম পার্টির সেক্রেটানি ছিলেন। মনোনয়ন বোর্ড তাকে মনোনীত করেছে আমরা কী করব। আমি নিজে ৩৯ বছর ধরে রাজনীতি করি। সান্তাহার সদর ইউপিতে মনোনয়ন চেয়েছিলাম পায়নি। সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয় দুই মাস আগে বিএনপি থেকে আসা এক নেত্রীকে।
এ বিষয়ে জানার জন্য আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ, পঞ্চম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ আব্দুল হক আবুকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করেন।