বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল নির্মাণের কটূক্তির কথা স্বীকার করলেন মেয়র আব্বাস
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো):
অবশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল নির্মাণ ও তাঁকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেয়া সেই অডিওটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটের নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে এসে তিনি এই কথা স্বীকার করেন। এজন্য তিনি দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। ১৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের সেই ফেসবুক লাইভে তিনি শুধু তার ফাঁস হয়ে যাওয়া ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের সেই অডিও বিষয়েই কথা বলেন।
লাইভে মেয়র আব্বাস অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘কাটাখালী জামিয়া ওসমানিয়া মাদ্রাসার বড় হুজুর জামাল উদ্দিন মাহমুদ। ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে দেখে এসেছি। আমার বিশ^াস তিনি একজন আল্লাহওয়ালা লোক। তিনি অনেক কষ্ট করে এই মাদ্রাসাটি নির্মাণ করেছেন। যেখান থেকে অনেক মুফতি, অনেক আলেম বের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।’
অডিও বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অডিওটি তিন-চার মাস আগের। মাদ্রাসার পাশেই এক লোকের জানাযায় গিয়েছিলাম। জানাজা শেষে বড় হুজুরের সঙ্গে সাক্ষাত করি। তার কয়েকদিন আগে কাটাখালী পৌরসভার গেইটের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করা জানিয়ে আমি ফেসবুকে একটি পোস্ট করি। তাঁর সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের পর তিনি আমাকে এই বিষয়টি জানিয়ে বললেন, আমার এক ছাত্র এই ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে তোমার ফেসবুক পোস্টটি আমাকে দেখালো। পরে ম্যুরাল নির্মাণ ইসলামে পাপসহ অনেক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করলেন। বড় হুজুরের আপত্তির কারণেই আমি কাটাখালী পৌরসভা গেট নির্মাণস্থলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ থেকে সরে আসি। আল্লাহর কথা আসলে, কুরআনের কথা আসলে কে না দুর্বল হবে। আমি গল্পের ছলে আড্ডার ছলে ম্যুরালটা ওইখানে করবো না বলেছিলাম।
মেয়র আব্বাস বলে, আমি একজন মুসলমান একজন আল্লাহওয়ালা লোকের কথা শুনে আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি এটা আমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তবে এর জন্য আমাকে নানা ধরনের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। যে শাস্তি আমি সহ্য করতে পারছি না। মেয়র আব্বাস আরো বলেন, এ ঘটনার পর থেকে আমার পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ছোট একটি ভুলের কারণে আমার বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র কেন করা হচ্ছে তা আমি আগামীতে এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরবো ফেসবুক লাইভে।’ মেয়র আব্বাস বলেন, কাটাখালী পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলরকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার ওপর অনাস্থা আনয়ন করা হয়েছে। যার সকল ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে।’ প্রায় ২০ মিনিটের এই ফেসবুক লাইভে তিনি দেশবাসীর সমর্থন কামনা করে তার পাশে দঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়ে আব্বাসকে কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, ‘বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ’Ñএমন একটি প্রসঙ্গ তুলে কাটাখালী পৌরসভার সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে না মর্মে মেয়র আব্বাসের ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে অশালীন ভাষায় তাকে কথা বলতেও শোনা গেছে। তার এই অডিও ক্লিপটিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। ইতোমধ্যেই কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার সদস্যপদ বাতিলসহ আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
কাটাখালী পৌর মেয়র তার ওই অডিও ক্লিপে বলেছিলেনÑ ‘সিটি গেট আমার অংশে। যে ফার্মকে দিয়েছি তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দেবে; ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে; যে মুর্যালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেটা ইসলামী শরীয়ত মতে সঠিক নয়। এজন্য আমি ওটা থুব না, সব করবো তবে শেষ মাথাতে যেটা ওটা (মুর্যাল)।’ মেয়র আব্বাস আলী বলছেন, ‘আমাকে যেভাবে বুঝাইছে আমি দেখতে পাচ্ছি যে মুর্যালটা ঠিক হবে না দিলে; আমার পাপ হবে; তো কেন দেব? দেব না। আমিতো কানা লোক না, যেভাবে বোঝাইছে তাতে আমার মনে হয়েছে মুর্যালটা হলে আমার ভুল করা হবে। এ খবরটা যদি যায় তাহলে আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে; এই মুর্যাল দিত চেয়ে দিচ্ছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করবো নাকি। এজন্য কিছু করার নেই। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না।’