শিরোনাম

South east bank ad

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কর্মস্থলে না থাকায় গফরগাঁওয়ে কাক্ষিত সেবা পাচ্ছেনা কৃষক

 প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এইচ কবীর টিটো, (গফরগাঁও):

গফরগাঁও উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে না থাকার অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কাজ করার কথা থাকলেও অধিকাংশ কৃষি কর্মকর্তারাই হঠাৎ মাঠে যান বলে জানা যায়। ফলে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন নিয়মিত পরামর্শ থেকে। অথচ গফরগাঁও উপজেলা একটি কৃষি নির্ভর এলাকা। এতদ অঞ্চলের কৃষিজাত পণ্যের যোগান চলে যায় সারা বাংলাদেশে। উপসহকারীদের এমন খামখেয়ালীতে কৃষকদের ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, সরকার কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে রোগ-বালাই প্রতিরোধসহ কৃষকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায়ে ব্লক সৃষ্টি করে প্রতিটি ব্লকে একজন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। যারা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট পাক্ষিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন। একটি ব্লকে রয়েছে ১২টা দল।

প্রতি দলে কৃষক রয়েছে ৩০ জন। উপসহকারীগণ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একটি দল এবং ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অন্য একটি দলের কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে থেকে পরামর্শ দেবেন। এরপর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ইউনিয়ন ভিত্তিক স্থাপিত কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র থেকে সহায়তা করবেন। এভাবে প্রতিদিন পাক্ষিক কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবেন একজন উপসহকারী এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর কাজের অগ্রগতির একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন স্থানীয় কৃষি অফিসে। এসব কর্মকর্তা প্রতি মাসে পাচ্ছেন সরকারি তহবিল থেকে মোটা অংকের বেতন, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। এসব উপসহকারী কর্মকর্তারা মাঠে না থেকে অফিসে বেশীর ভাগ সময় নিজেদের নানা তদবীর নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যায়। উপ সহকারীরা তাদের এসোসিয়েশনের প্রভাব বিস্তার করার নানা চেষ্টা করে থাকেন।

তাদের উদাসীনতার কারণে গফরগাঁও উপজেলার কৃষি কাজ মুখ তুবড়ে পড়ে আছে। শত শত কৃষক তাদের থেকে প্রকৃত সেবা না পেয়ে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। সুত্রে জানা যায়, গফরগাঁও উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়নকে ৩টি করে ৪৫টি ব্লক ও পৌরসভাকে ১টি ব্লক করে সর্বমোট ৪৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে ১ জন করে ৪৬ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও মাঠে নামমাত্র রয়েছে ২৯ জন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন ব্লকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ব্লকের কাজ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন ব্লক ঘুরে দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ে এই কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত সীমিত আকারে। নিয়মিত যাওয়া তো দূরে থাক কোন কোন কর্মকর্তা মাসের পর মাস একবার আসেন না বলে জানান প্রান্তিক কৃষকরা।

গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের সমস্যা, কৃষির নানা বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণের জন্য গফরগাঁও উপজেলার কর্মরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে খুঁজে পান না এলাকার কৃষকরা। এমন অভিযোগ উপজেলার অধিকাংশ এলাকার কৃষকের। কাগজে-কলমে এসব কর্মকর্তা ব্লকে কর্মরত থেকে কর্মস্থলে না এসেই নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এভাবেই চলে ব্লক কর্মকর্তাদের সপ্তাহের দায়িত্ব পালন।

গত এক সপ্তাহ ধরে গফরগাঁও উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে তথ্য মেলে গফরগাঁও ইউনিয়ন ,পাইথল,টাঙ্গাবো,নিগুয়ারী, দত্তেরবাজার, পাঁচবাগ,রসুলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চরআলগী ইউনিয়নে হঠাৎ সরকারি পর্যায়ের কৃষি কর্মকতাদের উপস্থিত ও অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখে প্রান্তিক কৃষকেরা বলছিলেন এখানে কি হচ্ছে?এমন প্রশ্ন আমিও নিজেও উপস্থিত থেকে উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রুহুল আমিনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,আমাদের কোন তথ্য মাঠ থেকে দেয়ার নিয়ম নেই।

কৃষক মনজুরুল হক(৫২),আঃরশিদ(৩৫)বাহার উদ্দিন(৫০),আফতাফ উদ্দিন (৪৫) বলেন,আমরা শীতের সবজি চাষ করেছি,কিন্তু পরামর্শ দিবেন এমন লোক আর পাই না।আজ দেখছি লোকের অভাব নেই।

খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, গফরগাঁও উপজেলার মধ্যে সবজি চাষে চরআলগী ইউনিয়ন ও টাঙ্গাব ইউনিয়ন বড় ভূমিকা রাখে প্রতি বছর।কিন্ত সরকারি ভাবে কোন উৎসাহ, পরামর্শ না পেয়ে এ অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক হতাশ হয়ে এ বছর সবজি চাষে অনেকেই বিরত রয়েছেন।তারা সরকারি পরামর্শ না পেয়ে স্থানীয় ঔষধ বিক্রয়ের দোকানীদের পরামর্শ নিয়ে যেটুকু পারছেন কোন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান প্রান্তিক কৃষকেরা।
টাঙ্গাব ইউনিয়নের দায়িত্ব উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে ঐ এলাকার কৃষি দালাল কৃষক ছাড়া অন্য কোন প্রান্তিক কৃষক চেনেন না বলে টাঙ্গাব ইউনিয়ন সাধারণ কৃষকেরা বিরক্তি প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন,আমি একা কাজ করি সবার কাছে যাওয়া হয়ে উঠে না। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার বলেন,আমি ছোট সময় থেকে (খুব ছোট হাত দিয়ে ইশারায় দেখান)শুনে এসেছি এই ধরণের অভিযোগের কথা।কৃষি অফিস কাজ না করলে এত সব কৃষি উন্নয়ন কিভাবে হচ্ছে।তিনি পাল্টা কৃষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন,কোন কৃষকের সমস্যা থাকলে সে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে ফোন দিবেন।তিনি আরো বলেন,আপনারা এতজন সাংবাদিক আছেন সবাই কি আর কাজ করে? আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সংখ্যা ৪৬ জন হলেও মাঠে রয়েছে মাত্র ২৯ জন।সবজি প্রদশর্নীর সংখ্যা ৪৫ টি জানালেও সরেজমিনে দেখাগেছে অল্প কয়েকটি।এবারের সবজি চাষ হচ্ছে ১৮৫০ হেক্টর জমিতে।লক্ষ মাত্রা অর্জন হবে বলে জানান তিনি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, তার ব্লকে দৈনন্দিন সম্পসারণ সেবা প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। কারিগরি, কৃষক ভাইরা যেন তাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন এবং সম্ভাব্য সমাধানও খুঁজে পেতে পারেন সে ব্যাপারে সাহায্য করা, স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে ব্লকে সম্প্রসারণ কর্মকান্ড বাসত্মবায়ন করা, কৃষকদের জন্য উপযুক্ত সম্প্রসারণ কর্মকান্ড পরিকল্পনার লক্ষ্যে উপজেলা পরিকল্পনা কর্মশালাকে সহায়তা প্রদান করা, তথ্য সংগ্রহ কৃষকের সহায়তা দেয়া। অন্যান্য সম্প্রসারণ সহযোগী সংস্থা থেকে সেবা গ্রহণে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করা, ব্লকের তথ্য ও রেকর্ড করা। যেমন-প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যা, বিভিন্ন আবাদি ফসলের পরিমাণ, উপকরণের চাহিদা, উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ পদ্ধতি, প্রযুক্তি ব্যবহার কৃষকের সংখ্যা, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও পরীক্ষামেত্ম ব্যবস্থ গ্রহণ ইত্যাদি। বিভিন্ন ফসলের শস্যকর্তন ও উৎপাদিত ফসলের ব্যবস্থা পরিসংখ্যান প্রণয়ন। প্রশাসনিক দায়িত্ব, দৈনন্দিন কাজের অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ কর্মকান্ডের পরিকল্পনা এবং কৃষকের চাহিদা ও সমাধানের বিষয় লেখার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডাইর সংরক্ষণ করা, এনজিও সম্পৃক্ত কৃষক দলসহ কর্মরত অন্যান্য কৃষক দল শনাক্ত করা, বার্ষিক সম্প্রসারণ কর্মসূচি অনুযায়ী পাক্ষিক কর্মসূচি ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক অফিসারের সাথে সহযোগিতা করা, উপজেলা অফিসে সভা ও প্রশিক্ষণে নিয়মিত এবং অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী রেজিস্টার প্রভৃতি ব্যবহার করে সম্প্রসারণ কর্মকার্ন্ডের বাসত্মবায়ন করা, সদস্য সচিব হিসেবে ইউনিয়ন কৃষি কমিটির সভা নিয়মিতভাবে বাসত্মবায়ন করার কথা থাকলেও অফিসিয়াল কাগজ পত্র সঠিক রেখে মাঠে যেন কৃষি পরামর্শের বিরানভূমিতে রূপ নিয়েছে গফরগাঁও উপজেলা।কৃষক সবজি চাষ সহ অন্য সব ফলনে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে ধারণা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞ মহল।অথচ সরকারের দিক থেকে সর্বচ্চো প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: