ডিবি’র তদন্তে ভাই-বোনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ও সহায়তার অভিযোগ প্রমাণীত হয়েছে
খন্দকার রবিউল ইসলাম, (রাজবাড়ী) :
আদালতে দুই সন্তানের জননী গৃহবধূর (২০) দায়েরকৃত মামলায় রাজবাড়ী ডিবি পুলিশের তদন্তে কথিত সমাজকর্মী সোনিয়া আক্তার স্মৃতি ওরফে স্মৃতি ইসলাম (৩০) ও তার ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম (২৭) এর বিরুদ্ধে ধর্ষণের ও সহায়তার অভিযোগ প্রমাণীত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিবির এসআই জাহাঙ্গীর মাতুব্বর গত ১লা অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বরাবর যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫/৬ বছর পূর্বে রাজবাড়ী সদর উপজেলার কোনাইল গ্রামের একজন অটো চালকের সাথে ভিকটিম (মামলার বাদী) এর বিয়ে হয়।
তাদের ৫ বছর ও ৯ মাস বয়সী ২টি পুত্র সন্তান রয়েছে। আসামী আরিফুল ইসলামের বাড়ীও একই গ্রামে। ভিকটিমের স্বামী অটো নিয়ে বাইরে যাওয়ার পর আরিফুল বাচ্চাদের খেলনা ও খাবার নিয়ে ওই বাড়ীতে যেত।
এভাবে ভিকটিমের সাথে আরিফুলের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠে। এরপর আরিফুল বিভিন্ন লোভ-লালসা ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। ভিকটিম তার বাবার বাড়ীতে গেলে আরিফুল সেখানে গিয়েও তাকে ধর্ষণ করে। এছাড়াও আরিফুল মাঝে-মধ্যেই ভিকটিমকে তার বড় বোন সোনিয়া আক্তার স্মৃতি ওরফে স্মৃতি ইসলামের রাজবাড়ী শহরের ৩ নং বেড়াডাঙ্গার বাসায় নিয়ে মেলামেশা করতো। স্মৃতি দু’জনের পরকীয়ার বিষয়টি জানতো এবং তাদেরকে অনৈতিক মেলামেশায় সহযোগিতা করতো।
সর্বশেষ ভিকটিম তার বাবার বাড়ীতে অবস্থানকালে গত ২৯/০৬/২০২১ ইং তারিখ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আরিফুল চুপিসারে তার শয়ন কক্ষে ঢুকে পূর্বের মতো বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে সহবাস করতে থাকে। ওই সময় ধস্তাধস্তির আওয়াজ পেয়ে ভিকটিমের বাবা ঘরের মধ্যে কে জিজ্ঞাসা করলে আরিফুল দরজা খুলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় স্থানীয় কয়েকজন আরিফুলকে দেখে ফেলে। এতে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়। ভিকটিম আরিফুলের সাথে দেখা করে তাকে বিয়ের কথা বললে সে তার স্বামীকে তালাক দিতে বলে। আরিফুলের কথা মতো গত ০১/০৭/২০২১ ইং তারিখে ভিকটিম তার স্বামীকে তালাক দেয়। এরপর আরিফুলকে বিয়ের কথা বললে সে বিয়ে না করে তালবাহানা শুরু করে। নিরুপায় হয়ে গত ১৮/০৭/২০২১ ইং তারিখে ভিকটিম বাদী হয়ে রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আরিফুল ইসলাম ও তার বড় বোন সোনিয়া আক্তার স্মৃতি ওরফে স্মৃতি ইসলামকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মিস.পি-১৮৬/২১ নং মামলা দায়ের করে।
বিজ্ঞ আদালত মামলার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)কে নির্দেশ দেয়। পরে ডিবির ওসি মামলাটির তদন্তভার এসআই জাহাঙ্গীর মাতুব্বরের উপর অর্পণ করেন।
তদন্তকালে এসআই জাহাঙ্গীর মাতুব্বর ভিকটিম ও তার বাবা-মা, স্বামীসহ মোট ৮ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এর পাশাপাশি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভিকটিমের ধর্ষণ সংক্রান্ত ডাক্তারী পরীক্ষা করানো হয়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ নাজনীন সুলতানার স্বাক্ষরিত ডাক্তারী পরীক্ষার সনদ পত্রে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিমের শরীরে সাম্প্রতিক যৌন মিলনের চিহ্ন রয়েছে। ভিকটিমের জবানবন্দী, প্রাপ্ত তথ্য, স্বাক্ষ্য-প্রমাণ, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও ডাক্তারী পরীক্ষাসহ সার্বিক তদন্তে আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের এবং তার বড় বোন সোনিয়া আক্তার স্মৃতি ওরফে স্মৃতি ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহায়তার অভিযোগ প্রতীয়মান হয়।