গৌরীপুর জংশনে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি রক্ষার দাবি
মশিউর রহমান কাউসার, (গৌরীপুর) :
‘ইস্টিশন হচ্ছে পাবলিকের জায়গা। গভর্নমেন্টের জায়গা। এই জায়গার ওপর সবার দাবি আছে। তা ছাড়া ইস্টিশনে কেউ না খেয়ে থাকে না। কিছু না কিছু জুটেই যায়। আর একটু বড় হলে মাল বাওয়া শুরু করতে পারবে। একটা স্যুটকেস নামালে ২ টাকা। ওভারব্রিজ পার হলে ৫ টাকা। তেমন ভদ্রলোক হলে বাড়তি বখশিশ। অবশ্য ভদ্রলোকও এখন তেমন নেই।’ জনপ্রিয় উপন্যাস ‘গৌরীপুর জংশন’-এ একটি দৃশ্যায়ন করতে গিয়ে কথাগুলো বলেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।
শুধু এ উপন্যাসই নয়, ময়মনসিংহের এ উপজেলা শহরটি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ তার বিভিন্ন লেখাতে স্মৃতিচারণ করেছেন। বিশেষ করে গৌরীপুর রেলস্টেশনের প্রতি তার ছিল প্রচন্ড টান। তাই হুমায়ূন ভক্তরা লেখকের প্রিয় স্থানটিতে তার স্মৃতি ধরে রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।
ভক্তদের তিন দফা দাবিগুলো হচ্ছে- ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথে চলাচলকারী একটি আন্তঃনগর ট্রেনের নাম হুমায়ূন আহমেদ ও কিংবা তার উপন্যাসের চরিত্রের নামে নামকরণ, গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনে হুমায়ূন আহমেদ চত্বর প্রতিষ্ঠা ও গৌরীপুর জংশনে হুমায়ূন আহমেদের ভাস্কর্য নির্মাণ।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনে হুমায়ূন আহমেদের ৭৩তম জন্মোৎসব উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি, কেককাটা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে স্থানীয় ভক্তদের সংগঠন হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি পরিষদ।
জন্মোৎসব অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদ সদস্য এইচএম খায়রুল বাসার বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের রচিত বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী উপন্যাস গৌরীপুর জংশন। এই উপন্যাসের কারণে গৌরীপুর জংশন আজ দেশ-বিদেশে একটি পরিচিত নাম। লেখকের স্মৃতি খুঁজতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসে এখানে। দাবিগুলো পূরণ হলে গৌরীপুর জংশন দর্শনীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হবে।’
গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন ‘দেশের রেলযোগাযোগ ব্যবস্থায় বনলতা এক্সপ্রেস, মহুয়া কমিউটার সহ বিভিন্ন নামে যেহেতু ট্রেন আছে তাই হুমায়ূন আহমেদ কিংবা তার উপন্যাসের জনপ্রিয় যেকোন চরিত্রের নামে ট্রেনের নামকরণের দাবিটি অমূলক নয়।’
সংগঠনের সভাপতি মোতালিব বিন আয়েত বক্তব্যে বলেন, ‘গৌরীপুর জংশনে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি রক্ষায় আমরা ট্রেনের নামকরণ সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে রেলমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু র্দীঘ সময় পার হলেও আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষ আমাদের দাবি পূরণে উদ্যোগী হবেন।’
হুমায়ূন আহমেদের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার ঘোষ, গৌরীপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজিম উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর আব্দুর রউফ মোস্তাকিম, সাপ্তাহিক রাজগৌরীপুরের উপদেষ্টা সম্পাদক আজম জহিরুল ইসলাম, গৌরীপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার আব্দুর রশিদ, প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব মশিউর রহমান কাউসার, গৌরীপুর রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি রায়হান উদ্দিন সরকার, হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পীযুশ রায় গণেশ, সহকারি শিক্ষক পলাশ মাজহার, আমিরুল মোমেনীন, মোজাম্মেল হোসেন, জামাল উদ্দিন, সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, শাহজাহান কবির, বিপুল কুমার চন্দ, মিলন খান প্রমুখ।