শিবগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে ইভিএমে ভোগান্তি
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার শিবগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে ইভিএমে ভোট গ্রহণে ধীরগতিতে ভোটাররা ভোগান্তিতে পড়েছিলেন।
উপজেলার ১১টির মধ্যে শিবগঞ্জ ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ১৫টি কেন্দ্রে ১০০টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়।
বেলা ১২টায় দিকে উথলী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নারী ভোটারের দীর্ঘ লাইন। রোদ উপেক্ষা করে কেন্দ্রের বাইরে কয়েকশ নারী ভোটারকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
আবিদা বেগম নামে এক নারী ভোটার দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘পয়লা বার ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে এসেছি। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। একটা ভোট দেবার এসে এতো কষ্ট জানলে ভোট দিতেই আসতাম না। তিনি বলেন, মেশিনেই ভোট দিবো, তাহলে এত সময় লাগবে কেন।
এই কেন্দ্রে ভোট দেন উথলী সাহাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ বিথী রানী সাহা। তিনি তার মাকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেন। ইভিএমে ভোট দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিল দিয়ে ভোট দেয়ার চেয়ে ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়া খুব সহজ। আমার বেশ ভালই লেগেছে।
এই কেন্দ্রের ভোটার নুরজাহান বেগম বলেন, ইভিএমএ কিভাবে ভোট হয় তা নিয়ে কৌতুহল ছিল। ভোট দিতে গিয়ে সমস্যাও হয়েছে। পরে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্যারেরা বুঝিয়ে দিয়েছে। মেশিনে ভোট দিয়ে ভাল লেগেছে। তবে ভোট দেওয়ার আগে পর্যন্ত মনের মধ্যে ভয় ছিল।
এই কেন্দ্রে ভোটার ছিল ২হাজার ৪৩৭। দুপুরে পর্যন্ত অর্ধেক ভোট দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।
এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সোহানুর রহমান জানান, বয়স্ক মানুষদের ভোট দিতে একটু সমস্যা হয়েছে। আমাদের অফিসাররা একটু দেখিয়ে দিলেই তারা ভোট দিতে পারছেন।
আলাদীপুর ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন নির্মাণ শ্রমিক হাবিব উদ্দিন প্রামানিক। কিন্তু শতচেষ্টা করে তার আঙুলের ছাপ মিলছিলনা। পরে ভোট কক্ষের বাইরে গিয়ে হাত সাবান দিয়ে ধোঁয়ার পর রোদে শুকিয়ে আনার পর ভোট গ্রহণ করা হয় তার।
এই কেন্দ্রে জীবনের প্রথম ভোট দিতে এসেছেন নতুন ভোটার বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন। ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে পেরে তিনি খুব খুশি।
ইটভাটার শ্রমিক মোকসেদুল ইসলাম ভোট এসে বিপাকে পড়েন। তার আঙুলের ছাপ কিছুতেই মিলছিলনা। পরে আঙুলে জেল মেখে তারপর তার ভোট নেওয়া হয়।
এই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার তারাজুল ইসলাম জানান, এরকম সমস্যা এখানে বেশি হচ্ছে। এজন্য ভোট গ্রহণে ধীরগতি হচ্ছে। সকাল থেকে এরকম প্রায় ৫০ জনের সঙ্গে এঘটনা ঘটেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এই এলাকার মানুষ বেশির ভাগ ইটভাটায় কাজ করেন। এজন্য তাদের আঙুলের দাগগুলো অনেকটায় অপষ্ট হয়েছে।
চৌধুরি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকেই পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল। এখানে ভোট ধীরগতিতে নেওয়া হয়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান বলেন, এই কেন্দ্রে আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে একজন ভোট দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, কেন্দ্রটিতে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬১০ জন। সকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ৮০৭টি ভোট পড়ে। ভোটগ্রহণ চলেছে সুষ্ঠুভাবে। সবাই একসাথে ভোট দিতে আসায় দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, ইভিএমএ ভোটাররা স্বত:স্ফুতভাবে ভোট দিয়েছে। ইভিএমএ ভোট দিতে পারেনি এরকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৬জন লড়ছেন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৪ জন ও সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ জন প্রার্থী। ১৫টি ভোটকেন্দ্রে ১০০টি ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট নেওয়া হয়।