চুরির অপবাদে মারধর, অভিমানে স্কুলছাত্রের আত্মহত্যা
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার দুপচাঁচিয়াতে কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করায় গ্যাস ট্যাবলেট সেবনে আত্মহত্যা করেছে স্কুল ছাত্র ইসমাইল হোসেন (১৭) নামে এক কিশোর।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাত ৮ টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ইসমাইল।
ইসমাইল উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বনতেঁতুলিয়া গ্রামের প্রবাসি বুলু প্রামাণিকের ছেলে। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
জানা গেছে, উপজেলার বনতেঁতুলিয়া গ্রামের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আলাউদ্দিনের একটি কবুতর বৃহস্পতিবার সকালে হারিয়ে যায়। কবুতরের খোঁপের সামনে কিছু রক্তও পড়েছিল। ওই দিন সকাল ৮টার দিকে আলাউদ্দিনের ছেলে মেহেদী তার দুই চাচাতো-ফুপাতো ভাই শাকিল ও মানিকসহ ইসমাইলের বাসায় গিয়ে তাকে উঠিয়ে নিয়ে আসেন। ইসমাইলকে ওই গ্রামের পরিত্যক্ত একটি দোকানে নিয়ে কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে তারা বেধড়ক মারধর করেন।
একপর্যায়ে ইসমাইলের মা ফাতেমা বেগম, চাচী ও দাদা ঘটনাস্থলে গিয়ে মেহেদীদের কাছে অনুরোধ করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। পরে দুপুর ১২টার দিকে আলাউদ্দিনের বাড়িতে এনিয়ে উভয় পরিবারের উপস্থিতিতে বিচার বসে। বিচারে কবুতর চুরির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন আলাউদ্দিনের ছেলে মেহেদী। একপর্যায়ে সাবেক স্থানীয় ইউপি সদস্য মনসুর আলীর মধ্যস্থতায় ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণে উভয় পক্ষ রাজি হয়। ইসমাইলের মা বিকেলের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এরমধ্যে মেহেদী ও তার ভাইয়েরা মিলে ইসমাইলকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
এ অপমান সহ্য করতে না পেরে বিকেলে ইসমাইল গোপনে গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করেন। একপর্যায়ে বাড়িতে এসে সে বমি করতে থাকলে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দুপচাঁচিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আটটার দিকে ইসমাইলের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি সদস্য মনসুর আলী জানান, উভয় পরিবারের মিমাংসার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তবে মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
দুপচাঁচিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, ইসমাইল নামের স্কুলছাত্রের গ্যাস ট্যাবলেট সেবনে চিকিৎসাধীন থাকার কথা আমরা জানি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।