শিরোনাম

South east bank ad

রংপুরের হারাগাছের ঘটনায় তিন মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন

 প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, (রংপুর) :

রংপুরের হারাগাছে আটকের পর পুলিশের নির্যাতনে তাজুল ইসলাম (৫০) নামের একজনের মৃত্যুর অভিযোগে থানা ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করায় সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এঘটনায় ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার (৩ অক্টোবর) সকালে রংপুর মেট্রোপলিটনের উপপুলিশ কমিশনার(অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার রংপুর মেট্রোপলিটনের হারাগাছ থানায় মামলা তিনটি করা হয়। নিহতের ছোট ভাই মোর্তুজা রহমান বাদী হয়ে অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলাটি করেন। একটি মামলায় থানা ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ আনা হয়। তৃতীয়টি মাদক উদ্ধারের মামলা করা হয়। দুটি মামলা পুলিশ বাদী হয়ে করেছে।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মেহেদুল করিমকে (পিপিএম-সেবা) প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সদস্যরা হলেন উপপুলিশ কমিশনার(সিটিএসবি) আবু বকর সিদ্দীক, উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (পশুরাম জোন) আরিফুল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় রংপুর মেট্রোপলিটনের হারাগাছ থানার পুলিশ নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপতি নামক স্থানে অভিযান চালায়। এসময় হারাগাছের দালালহাট নয়াটারী এলাকার মৃত শওকত আলীর ছেলে তাজুল ইসলামকে মাদক সেবনের অভিযোগে আটক করে পুলিশ। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের নির্যাতনে তাজুলের মৃত্যুর অভিযোগ তোলে স্থানীয়রা।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে হারাগাছ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাজুল হত্যার বিচার দাবি করে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ থানা ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়। ভবনের সামনে রক্ষিত পুলিশ ভ্যান ও মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে থানা ভবনের ভিতরে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

রাতেই তাজুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ময়না তদন্ত শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে তাজুল ইসলাম ছিলেন অবিবাহিত।

সরেজমিনে হারাগাছ থানায় গিয়ে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের নিক্ষেপ করা ইটপাটকেল থানা ভবনের একপাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে। দ্বিতল ভবনের জানালার কাঁচ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। থানার শিশু ও সেবাকেন্দ্রের কক্ষটি বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। ভবনের সামনে রাখা পুলিশ ভ্যান ও মোটরসাইকেলসহ গাড়ি রাখার গ্যারেজ ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে থানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনার পর তাদের মধ্যে কাউকে আটক করা হয়নি। সকাল থেকেই স্থানীয় দোকানীরা দোকান পাট খুলে ব্যবসা করছেন। ক্রেতাসহ এলাকার লোকজন নির্বিঘ্নে চলাচল করছে।

হারাগাছ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম ফিরোজ বলেন, কয়েক মাস আগেও তাজুল ইসলাকে মাদকসহ আটক করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।

হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার জানান, সন্ধ্যায় নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপতি থেকে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় আটক করে তাজুল ইসলামকে হাতকড়া পড়ানো হয়। এতে ভয়ে সে মলত্যাগ করে ফেলে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ হাতকড়া খুলে দেয়। এর পর পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে যে তাজুল ইসলাম মারা গেছেন। এঘটনায় ভুল তথ্য পেয়ে থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর করেছে এলাকাবাসী।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার(অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশের অভিযানে আটকের পর ভয়ে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানা ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগে ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুইটি মামলা করেছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর তাজুলের মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর(ইউডি) মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: