দাদনের টাকা পরিশোধ না করায় চাষীকে মারপিট
মো: রবিউল ইসলাম, (নাটোর):
দাদনের টাকা পরিশোধ না করায় নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় দাদন ব্যবসায়ীর মারপিটে আহত হয়েছেন আবু তাহের (৫৫) নামে এক পেয়ারা চাষী।
সোমবার (১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস সংলগ্ন কেয়ার হাসপাতালের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
আহত চাষী আবু তাহেরকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নাটোর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন সাহার নির্দেশে সুদ ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে আটক করে পুলিশ। আটক খোরশেদ আলম সদর উপজেলার চন্দ্রকোলা গ্রামের আব্দুল মন্ডলের ছেলে।
এদিকে, পেয়ারা চাষীকে মারপিট ও টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার আংশিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, নাটোর শহরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকার দাদন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসা করে আসছে। একই এলাকার পেয়ারা চাষী আবু তাহের বছর দুই আগে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের সেমিষ্টার ফ্রি এবং পারিবারিক প্রয়োজনে মাসিক ৬ হাজার টাকা হারে সুদে দাদন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমের কাছে সাদা ষ্ট্যাপে স্বাক্ষর করা চেক রেখে ১লাখ টাকা দাদন নেয়।
এর মধ্যে দুই বছরে লাভ দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। এছাড়া তিনমাস আগে সুদসহ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাকি টাকা দিতে দেরি হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ী তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।
সোমবার রাতে সুদ ব্যবসায়ী পেয়ারা আড়ৎ এ গিয়ে আরোও দেড়লাখ টাকা দাবি করেন। দিতে না পারায় তারা পেয়ারা চাষীকে বেদম মারপিট করে টেনে হিঁচড়ে বাইকে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় ।
নির্যাতনের শিকার আবু তাহের জানান, আমি দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পেয়ারা চাষ করে আসছি। আমার দুই ছেলেই অনেক মেধাবী। বড় ছেলে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটে তখন পড়াশোনা করতো। ছেলের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে সেমিষ্টার ফি এবং পারিবারিক প্রয়োজনে টাকাটা নিয়েছিলেন। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য এক মাস সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা সময় না দিয়ে তাকে মারপিট করেছে। এ ব্যাপারে তিনি নাটোর সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানান।
দাদন ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি দাদন ব্যবসা করিনা। ব্যবসার জন্য তার স্বাক্ষরিত সাদা ষ্ট্যাপে ও চেক রেখে ১০ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলাম । সে আমাকে হিসাব না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সিসি টিভি ফুটেজের কথা বলতেই তিনি ফোন কেটে দেন ।
অপরদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে খবরটি শোনামাত্র নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নির্দেশে সুদ ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় ।
সদর থানার ওসি মনসুর রহমান জানান, পেয়ারা চাষী আবু তাহেরকে মারপিটের অভিযোগ পেয়ে খোরশেদ আলম কে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।