মাটি কেটে নেয়ায় হুমকিতে বরিশাল নগর রক্ষা বাঁধ
বরিশাল ব্যুরো :
বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা মো. সুজন সম্প্রতি ফজরের নামাজের পর বাড়ির পাশের কীর্তণখোলা নদীতে জাল ফেলতে যান। তিনি জানান, জাল ফেলতে গিয়ে দেখেছেন একদল লোক কীর্তণখোলার তীরে নগররক্ষা বাঁধের ব্লক তুলে মাটি কেটে নৌকায় তুলছে। ওইমাটি বিক্রি করা হবে ইটভাটায়।
শুস্ক মৌসুম শুরুতেই নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ব্লক সরিয়ে বাধের মাটি রাতের আধারে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। ইটভাটা মালিকদের একটি চক্রও এর সঙ্গে জড়িত। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাধ। বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে হলেও বিসিসি কতৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কীর্তণখোলার নগরীর প্রান্তের দপদপিয়া সেতু থেকে ত্রিশ গোডাউন পর্যন্ত নির্মানাধীন নগর রক্ষা বাঁধের অসংখ্য জায়গায় ব্লক তুলে গভীর করে মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। এমনকি মাটি কেটে নেয়ায় একাধিক পয়েন্টে জোয়ারের পানি ঢুকে গভীর চ্যানেলের সৃষ্টি হয়। নগরীর ১২ ওয়ার্ডের ওই অংশটিতে কোন বসতি নেই। বাঁধের মধ্যে নদীর অংশ পড়ার অভিযোগে ২০১৬ সালে পরিবেশ বাদী আইনজীবী মনজিল মোর্সেদের করা রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চাদালত নগররক্ষা বাঁধ নির্মান কাজটি কয়েকবছর যাবত স্থগিত রয়েছে।
ওই এলাকার নৌকার মাঝি আব্দুল ওহাব জানান, প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার আগে একদল লোক এসে মাটিকেটে নৌকায় নিয়ে যান। ইটভাটায় ওই মাটি বিক্রি করা হয় বলে শুনেছেন। ব্লকগুলোও নৌকায় নিয়ে যায় ওই লোকগুলো। স্থানীয় সকলে বিষয়টি জানলেও ঝামেলা এড়াতে কেউ এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করেন না।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নগর রক্ষাবাধ নির্মানের জন্য সরকার ৩০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়। যার মধ্যে ২৪ কোটি টাকায় রক্ষাবাধ ও বাকি ৬ কোটি টাকায় বাধের উপরের সড়ক নির্মান করার কথা ছিল। এই কাজের একাংশের কাজ সম্পন্ন হলেও বিপত্তি দেখাদেয় বধ্যভুমি এলাকার সাগরদী খাল থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত এক কিলোমিটার কাজে। এখানে ঠিকাদার কীর্তনখোলা নদীর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট ভরাট করে নগর রক্ষাবাধ নির্মানের অভিযোগ ঊঠলে তা আদালতে গড়ায়। ফলে ওই অংশের কাজ মাঝ পথে আটকে যায়। ফলে পরিত্যক্ত ওই বাধের ব্লক ও মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছে একটি মহল।
বাধের মাটি কাটার পর তা ইট ভাটায় বিক্রির বিষয়ে মিনা ইটভাটার মালিক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি বিভিন্ন এলাকায় রেকর্ডিয় জমি কিনে সেখান থেকে ইটভাটার জন্য মাটি আনেন। তার ভাটার মাটি সংগ্রহ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে বলে জানান সৈয়দ সিরাজুল। তিনি বলেন, কীর্তণখোলার পূবাংশে অসংখ্য ইটভাটা। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ চুরি করা মাটি ক্রয় করে। ফুজি ইটভাটার সাবেক ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমানও ইটভাটায় বাধের মাটি ব্যবহারের অস্বীকার করে বলেন, তাদের ভাটাটি এবছর জনৈক নুর হোসেন নামক এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ত্রিশগোডাউন সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী নগর রক্ষায় ব্লক ফেলে যে বাধ দেয়া হচ্ছিল তার একাংশ সিটি করপোরেশন এবং বাকি অংশ পাউবো বাস্তবায়ন করছে। যেসব স্থান থেকে ব্লক তুলে নেয়া হচ্ছে তা পাউবোর আওতায় কি-না খোঁজখবর নিয়ে তাকে জানতে হবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো : ফারুক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে কোন কোন স্থানের ব্লক ও মাটি কাটা হচ্ছে তার খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।