নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে অপহরণ-অর্থ আদায়, অপরাধী চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
রাজশাহীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যকে অপহরণ, প্রাণনাশের হুমকি ও চাঁদা আদায়ের অপরাধে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত সোমবার সন্ধ্যায় মহানগরীর বহরমপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও ৪ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় মহানগর পুলিশের সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- রাজশাহীর কাটাখালী থানাধীন সমসাধীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. গাজী সালাউদ্দিনের ছেলে মো. সায়েম উদ্দিন শ্যাম, বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন হাদির মোড় এলাকার মৃত দুলাল বিশ্বাসের ছেলে মো. পারভেজ, এয়ারপোর্ট থানাধীন বায়া তেরিপাড়া গ্রামের মো. বাপ্পী হোসেনের স্ত্রী মোসা. রাজিয়া সুলতানা সুমা এবং রাজপাড়া থানাধীন বহরমপুর গ্রামের মো. মামুনুর রহমান বাবুর স্ত্রী মোসা. শরিফা আক্তার সাথী।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার জানান, মো. ইকবাল (ছদ্মনাম) নামে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরাল। বর্তমানে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের ডিজিএম এর গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত। ভুক্তভোগী ইকবাল গত ৩১ অক্টোবর নাটোর থেকে শিরোইল বাস টার্মিনালে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য অটোরিক্সায় উঠেন। এ সময় আরো দুইজন নারী ওই অটোরিক্সায় উঠে। কিছুক্ষণ পর ওই দুই নারী ইকবালের হাতে চিরকুটে লেখা একটি একটি ঠিকানা ধরিয়ে দিয়ে বলে, তারা রাজশাহীতে নতুন এসেছে, কিছুই চেনেন না। তাই ঠিকানা মোতাবেক তাদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইকবালকে অনুরোধ করে। তাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে চিরকুটে লেখা ঠিকানায় ওই দুই নারীকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অটোরিকশাযোগে নগরীর ঐতিহ্য চত্ত্বরে আসলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, আরো দুইজন পুরুষ ওই অটোরিকশায় উঠেন। ঠিক তখনই তারা ইকবালকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শরিফা আক্তার সাথীর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে শরিফার সাথে ইকবালের জোরপূর্বক অশ্লীল ছবি তোলে। এরপর অপহরণকারীরা ইকবালের নিকট ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেলে অশ্লীল ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে এবং নিজের মান-সম্মানের স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যাগে থাকা ৫০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু অপহরণকারীরা আরও এক লাখ টাকা করে এবং বলে যে, কালকের মধ্যে এই এক লাখ টাকা না দিলে অশ্লীল এই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হবে। সেই সাথে ইকবালের বসকেও এসব ছবি সরবরাহ করা হবে। পরে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ভুক্তভোগী ইকবার মহানগর ডিবি পুলিশকে মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম আসামিদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে।
এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভুক্তভোগী ইকবালকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের অবস্থান সনাক্ত করে গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর রাজপাড়া থানাধীন বহরমপুর এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়েয় প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ এই চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আসামিদের থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরপূর্বক সোমবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।