শিরোনাম

South east bank ad

‘মান্থলি’তে মহাসড়কে চলে অবৈধযান

 প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

ফয়সাল আহম্মেদ, (গাজীপুর) :

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বর্তমান সরকার এই মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করেন। সরকারের নানা প্রচেষ্টা ছিল সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাগব ও নিরাপদ যাতায়াতের সুযোগ তৈরী করা। এতোকিছুর পরও দিন দিন অনিরাপদ হয়ে পড়ছে এই মহাসড়ক। হাইওয়ে পুলিশের নিরব ভূমিকায় বর্তমান মহাসড়কে অবৈধযান চলাচল বাড়ছে, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত গতির যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মান্থলি বানিজ্যের মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে এই মহাসড়ক।

গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ২২কিলোমিটার এলাকার দায়িত্ব মাওনা হাইওয়ে থানার । ইতিপূর্বে সরকারের কঠোর নজরদারীতে অবৈধযান চলাচল বন্ধ থাকলেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন যোগদানের পর থেকেই মহাসড়কে বেড়েছে অবৈধযানের দাপট। হাইওয়ে থানা এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে দালালী সিন্ডিকেট। ক্ষমতাসীন দলের গুটিকয়েক রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই অবৈধ যান বানিজ্য, মহাসড়কের উপর বাজার, মাওনা চৌরাস্তার ফুটপাত ও মহাসড়ক দখল করে দোকানপাট, ওড়াল সড়ক ঘিরে মান্থলি বানিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট।

মহাসড়কে বিভিন্ন ব্যাটারীচালিত ত্রি-চক্রযান (অটোরিক্সা) চালকরা জানান, মহাসড়কের জৈনা বাজার থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ও মাওনা চৌরাস্তা থেকে গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিন দুই শতাধিক অটোরিক্সা ও অটোভ্যান চলাচল করে। প্রতিটি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে ৩হাজার টাকা করে মান্থলির নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। হাইওয়ে থানা ঘিরে গড়ে উঠা স্থানীয় দালালদের হাতে এ টাকা প্রদান করতে হয়। মান্থলি হয়ে গেলে এসব গাড়ীতে নানাভাবে সংকেত দেয়া হয়। পরে পুলিশের সামনে পড়লে তাদের সে সংকেত প্রদর্শণ করলে সেসব গাড়ী ছেড়ে দেয়া হয়। তবে যেসব গাড়ী মান্থলী করা থাকে না তাদের নানাভাবে হাইওয়ে পুলিশ হয়রাণী করেন। গাড়ী আটকিয়ে তাদের কাছে টাকা পয়সা দাবী করা হয়, টাকা না দিলে মামলা দেয়া হয়। প্রতিটি মামলায় ২৭০০টাকা জমা দেয়া হলেও গাড়ী ছুটিয়ে আনতে ৫হাজারের উপর টাকা খরচ হয়ে যায়। এছাড়াও মামলার ভয় দেখিয়েও টাকা পয়সা আদায় করেন হাইওয়ে পুলিশ। মান্থলি বানিজ্যের অধিকাংশরাই পুলিশের নিয়োগ করা সোর্স, এর মধ্যে কেউ বা আবার বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাকর্মী।

মাওনা চৌরাস্তার দৃষ্টিনন্দন উড়াল সড়কের নীচে ও মহাসড়কের উপর ভ্রাম্যমান শতাধিক দোকানপাট বসিয়ে হাইওয়ে পুলিশের টাকা পয়সা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের সহযোগিতায় এসব দোকান পাট ও ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌছেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটেও হাইওয়ে পুলিশের দেখা মেলেনা। এছাড়াও মহাসড়কের উপর বিভিন্ন যানবাহনের ষ্ট্যান্ড(গাড়ী দাড়ানোর স্থান তৈরী) থেকেও পুলিশের নাম করে মান্থলী আদায় ও মহাসড়কে দাড়িয়ে থাকা বিভিন্ন শিল্পকারখানার পণ্যপরিবহনের গাড়ী থেকেও টাকা পয়সা আদায় করে পুলিশের নিয়োগ করা সোর্সরা। এছাড়াও বালি পরিবহনের ট্রাক, মাছ ও মুরগী পরিবহনের পিকআপ সহ কয়েকশত যান থেকেও নিয়মিত টাকা পয়সা আদায় করা হয়। পুলিশের তেমন কার্যক্রম না থাকায় প্রতিদিনই যানজটে দীর্ঘসময় অচল হয়ে যায় মাওনা -কালিয়াকৈর-ধামরাই সড়ক। এ সড়কের দুপাশ দখল করে ৫গজ এলাকা জুড়ে বসানো হয়েছে শতাধিক দোকানপাট।

মাওনা চৌরাস্তার মোড়েই রয়েছে বিভিন্ন সিএনজি ষ্ট্যান্ড এখানে দাড়াতেও প্রতিটি সিএনজিকে মাসে টাকা গুনতে হয়। এছাড়াও সড়কের লেন দখল করে গড়ে উঠেছে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের ষ্ট্যান্ড। এসব ষ্ট্যান্ড থেকে পুলিশের নাম করে স্থানীয় শ্রমিকলীগের এক নেতা প্রতিমাসেই অর্ধলাখ টাকা আদায় করেন।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল ধানিখোলা গ্রামের আতাবুর রহমান প্রায় তিন বছর ধরে এমসি বাজার এলাকায় ভাড়া থেকে অটোরিক্সা চালান্। তিনি বলেন, আগে মহাসড়কে উঠতে পারতাম না, করোনার পর অটোরিক্সাগুলো মূলত মহাসড়কে উঠে। দুবার পুলিশ ধরে মামলা দিয়েছিল। পরে মান্থলী করে নেই। এখন আর কেউ ধরে না।

স্থানীয় সিংগারদিঘি গ্রামের মনির হোসেন বলেন, তার দুটি সিএনজি আঞ্চলিক সড়কে চলাচল করে। মাওনা চৌরাস্তা দাড়াতে পুলিশের নাম করে প্রতিমাসে প্রতিগাড়ী হতে ৩শত টাকা করে উঠানো হয়। টাকা না দিলে সেখান থেকেই ধরে নিয়ে মামলা দেয়া হয়। তার লাইনে অর্ধশত সিএনজিচালিত অটোরিক্সা রয়েছে।

মান্থলী কার কাছে করেছেন তার জবাব প্রতিটি পুলিশ অফিসারের কয়েকজন সোর্স রয়েছে এছাড়াও হাইওয়ে থানায় এসব দালালরা নিয়মিত দেনদরবারে ব্যস্থ থাকে। তাদের কাছে মান্থলী করতে হয়।

এনা পরিবহনের চালক আমির হোসেন বলেন, চারলেনে উন্নীত করার পর আমরা নিরাপদ মহাসড়কের আশা করেছিলাম। এখনতো দেখি মৃত্যুফাঁদ তৈরী হচ্ছে। সড়কের আইন কানুন না জানা এসব অবৈধযানের কারণে এখন গাড়ীও ঠিকমতো চালানো যায় না। এসব যান সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে দুর্ঘটনা ঘটায় আর দায় পড়ে আমাদের উপর।

নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ন মহাসচিব লায়ন গনি মিয়া বাবুল বলেন, মহাসড়কে অধিকাংশ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে এসব অবৈধ যান, অদক্ষ চালক। আমরা সড়ক নিরাপদ করে দীর্ঘদিন ধরেই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে যদি মহাসড়কে অবৈধযান চলাচল বাড়ে তা সত্যিই হতাশাজনক। হাইওয়ে পুলিশের অন্যতম কাজই হচ্ছে মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে কার্যক্রম চালানো, অথচ তারাই বিভিন্ন অবৈধ যান চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছেন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টিতে নজর দেয়ার দাবী তার।

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মান্থলি বানিজ্যের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। তবে তাহলে কিভাবে মহাসড়কে এসব অবৈধযানবাহন চললে এর জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, তাদের ধরছি, নিয়মিত মামলাওতো দিচ্ছি।

হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার আলী আহমদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই অবৈধ যান আটক করে মামলা দিচ্ছি। এর পরও অবৈধ যান চলচল করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে এসব অবৈধযান থেকে পুলিশের মান্থলী করার কোন সুযোগ নেই। এমন উপযুক্ত প্রমান পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: