স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর, নারীসহ আহত- ১৫
আরাফাত হাসান, (মাদারীপুর) :
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর স্বতন্ত্র ও শিকারমঙ্গল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হয়েছেন নারীসহ অন্তত ১৫ জন।আলীনগর ইউনিয়ন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, একটি প্রাইভেট কারসহ ১৬টি মোটরসাইকেল।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীদ পারভেজ ও তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণামূলক আলোচনা সভা করেন। হঠাৎ আলীনগর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাফিজুর রহমান মিলন তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ইউপি ভবনের পাশ দিয়ে তাঁর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীদ পারভেজ ও তার কর্মী সমর্থকরা হাফিজুরকে দেখে উত্তেজতি হয়ে ওঠে। পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা শোডাউন দিয়ে হাফিজুর ও তারই ভাই কালিনগর ফাসিয়াতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহারাব হোসেন কিরণের বাড়িতে আতর্কিত হামলা চালায়। ইট-পাটকেল ছুঁড়ে ঘরের দরজা জানালা ভাঙচুরসহ হাফিজুরের একটি প্রাইভেট কার, তার ঘরের সামনে থাকা অন্তত ১৬টি মোটরসাইকেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। হামলাকারীদের বাঁধা দিতে গেলে আহত হয় নারীসহ ৮ জন। তারা হলেন, তামিম তালুকাদর মুক্তা বেগম, উজ্জ্বল তালুকদার, জিফাত সরদার, দিলদার সরদার, মোহাম্মদ আলী, মাসুম চৌকিদার, আকাশ খান। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কালকিনি থানার পুলিশ ও র্যাব-৮ এর একটি দল।
এছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিকারমঙ্গল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল আলম মৃধা উত্তর চরফতে বাহাদুরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি নির্বাচনী পথসভার আয়োজন করে। সভাস্থল থেকে মাত্র একশ মিটার দক্ষিণে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল হক মালের বাড়ি থাকায় হঠাৎ উত্তেজিত জনতা সভাস্থল থেকে তার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজে ও তার দুই ছেলেসহ কয়েকশ কর্মী ও সমর্থক হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগ উঠে। এ সময় বিক্ষুদ্ধদের হামলায় বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা হারুণ অর রশিদ, বোন মুশীদা বেগম, ছোট ভাই মনির মাল, মেরেনি বেগম, শিরিন বেগম, রোমান মাল, ফরহাদ মাল, কবির মাল আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আলীনগর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি এ ধরণের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার আঁচ পেয়ে আগেই প্রশাসনকে জানাই। লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ডিসিকেও। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে তারাও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমার ঠিক বাসার সামনে নৌকার প্রার্থী নির্বাচনী ক্যাম্প বসিয়ে এ ধরণের হামলা-ভাঙচুর একটি ন্যাকারজনক ঘটনা। নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজন হামলা করে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ সৃষ্টি করতেছে। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এমন হামলা চাই না।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহেদ পারভেজ বলেন, ‘আমার নির্বাচনী ক্যাম্পটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে। আমরা ক্যাম্পটি উচ্ছেদ করতে প্রথম স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। পরে তারা নিজেরা হামলা থেকে বাঁচতে তারাই নিজেদের ঘর, গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আমাদের দিকে দায় চাপাচ্ছে।’
শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল হক মাল প্রথম আলোকে অভিযোগ করে বলেন, গত পরশু (মঙ্গলবার) আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনী আচারণ বিধি ভঙ্গ করে প্রচারণা ও আমাকে হুমকি বিষয় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত জানিয়েছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আজকে (বৃহস্পতিবার) ঘরে ভিতরে ঢুকে তান্ডব। হামলায় আমার দুই বোন, আমার চাচাতো ভাইসহ ৭ জন আহত হয়েছে। এটা কেমন নির্বাচন? নৌকা পেয়েছে বলে যা খুশি তাই করবে সিরাজুল? এটা কেমন আচরণ। আমরা এর বিচার চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিরাজুল আলম মৃধা বলেন, আমার কোন নেতাকর্মী বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায় নাই। যারা এসব কথা বলছে, তারা নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার জন্য বলছে। আসল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে।’
এ সম্পর্কে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসতিয়াক আশফাক বলেন, দুটি ঘটনাই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এখানে দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের বিরোধের কারণে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে আলী নগরে ঘটনাটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক মানিকের নেতৃত্বে হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই পক্ষকেই থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা শনিবার সকাল ১০ পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারা অভিযোগ মামলা নেওয়া হবে।’