জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হেলে পড়া মসজিদেই নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা
মো: রবিউল ইসলাম, (নাটোর):
নাটোর শহরতলীর বড়ভিটা দাদাপুর জামে মসজিদের দেওয়ালের একাংশ পুকুরে ধসে পরেছে দুই মাস আগে ।পুরো মসজিদেই দেখা দিয়েছে ফাটল । মসজিদের টিনের চালটি বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। শহরের পিটিআই মোড় থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে বাইপাস সড়ক সংলগ্ন দাদাপুর রোডে মসজিদটির অবস্থান । দাদাপুর সড়কের দুই পাশে সরকারী জায়গায় দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস । এখানকার অধিকাংশই অধিবাসীই দিনমজুর এবং হৃতদরিদ্র । তারাই এই মসজিদের নিয়মিত মুসল্লী ।
এলাকাবাসীরা জানান, ৯০এর দশকে নিজেরা হচাঁদা তুলে এবং কয়েকজন বিত্তবানের সহায়তায় মসজিদটি গড়ে তোলা হয় । দুই মাস আগে মসজিদটির একাংশের দেওয়াল পুকুরে ধসে পরে । একদিকে অনেকটা হেলে পরেছে। ওই অঞ্চলে আর কোনো মসজিদ না থাকায় হেলে পড়া মসজিদেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের একাংশ ধসে পরায় দেওয়ালে এবং মেঝের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। টিনের চাল বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে । জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মসজিদটিতে মুসল্লীরা নামাজ আদায় করছে ।মসজিদটি এতোটাই পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে ,সেখানে আর নামাজ আদায় করার কোন সুযোগ নেই। পুকুরে ধসে পড়ায় মসজিদের মেঝের অংশসহ বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। তবুও উপায়হীন এই গ্রামের মুসল্লিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আহবান করে দেওয়া হয় আজান। এখনো ঈমামতি করে ঈমাম সুমন আলী ।সব কিছু ছাপিয়ে পাঁচ ওয়াক্তেই জামাতের ব্যবস্থা হয় প্রতিদিন। তবে সেই জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।
স্থানীয় মুসল্লী করিম হাওলাদার বলেন, অধিক সওয়াবের আশায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে মসজিদে যেয়ে জামাতে নামাজ পড়ি। তবে আশে পাশে মসজিদ থাকলে এমন ঝুঁকি নিতেম বলে জানান তিনি। মুসল্লি মালেক শেখ বলেন, দিনের পর দিন, যেভাবে মসজিদটি হেলে পরছে। যে কোন সময় পুরোটা ধসে পরতে পারে পুকুরের বুকে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন জানান, শুধু জীবনের ঝুঁকি নয়, নামাজে দাঁড়ানোর সময় নিজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারলেও সেজদায় যেয়ে দেহের ভারসাম্য রাখা অনেক কষ্টের হয়ে পরে। রুকুতে গেলে কিছুটা হেলে পড়তে হলেও সেজদায় গেলে মনে হয় পুরো দেহ একেবারে গড়িয়ে পরবে।মসজিদটি নতুন ভাবে তৈরী করতে অনেক টাকার দরকার যেটা আমাদের এখানকার গরীব অধিবাসীদের নেই । টাকার অভাবে যে কোন রকমের অবকাঠামো তৈরীর কাজে হাত দিতে পারছেনা তারা।
মসজিদের ঈমাম সুমন আলী জানান, নামাজের জন্য জামাত বাধা হলে সেই সময় মুসল্লিদের মনে বিপদের শঙ্কা না থাকলেও স্বজনরা উৎকণ্ঠায় থাকেন।মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার ।কিন্তু অর্থাভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। মসজিদের দেওয়াল ধসে পরায় পুরো মসজিদে ফাটল দেখা দিয়েছে ।সবকিছু ছাপিয়ে পাঁচ ওয়াক্তেই জামাতের ব্যবস্থা হয় প্রতিদিন। তবে সেই জামাতে মুসল্লির সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। মুসল্লি সামাদ শেখ বলেন, দিনের পর দিন যেভাবে মসজিদটি হেলে পরছে তাতে যেকোনো সময় পুরোটা ধসে পরতে পারে । তাই প্রয়োজন মসজিদটির সংস্কার । কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা সবাই দিনমজুর । ইচ্ছে থাকলেই আল্লাহর ঘরের সংস্কারের জন্য তারা কিছুই করতে পারছে না ।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ বলেন, নতুন করে মসজিদ নির্মাণে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিৎ। তবে তাঁদের পক্ষ থেকে যতোটুকু পাশে থাকা যায়, তেমনটা থাকবেন বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।
নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নের ৮ নং দাদাপুর রোড জামে মসজিদের উন্নয়নের জন্য দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের কাছে আর্থিক অনুদান ও সাহায্য আবেদন করেছেন উক্ত মসজিদের সভাপতি এবং সম্পাদক। সবাই যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করেন তাহলে আল্লাহর ঘর মসজিদের এ কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জানান স্থানীয়রা।