গৌরীপুরে প্রাইমারী স্কুলের বেহাল অবস্থা, উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা যাচ্ছে কোথায়?
মশিউর রহমান কাউসার, (গৌরীপুর) :
সাইনবোর্ড না থাকায় প্রথমে মনে হচ্ছিল গ্রামের একটি বাড়ি। স্থানীয় লোকজন দেখিয়ে না দিলে বুঝার উপায় ছিলনা এটি একটি স্কুল। মূল রাস্তা থেকে স্কুলের সংযোগ রাস্তার শুরুতে ছোট গর্ত, তাতে জমে আছে পানি। মাত্র ৫শ টাকার একটি প্লাষ্টিক পাইপ স্থাপন করলে নিরসন হতো এ সমস্যা। স্কুলের মাঠ কর্দমাক্ত। জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডে দড়ির বদলে দেয়া হয়েছে পলিথিন। প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের টিনের ঘরে ছোট তিনটি শ্রেণি কক্ষে চলছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আর প্রায় ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি কক্ষে অফিস রুম। টিনের ছাউনির নিচে সিলিং ও বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। নেই কোন ওয়াশ ব্লক। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ১৭৭ নং নন্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল চিত্র এটি।
১৯৯০ সনে স্কুলটি স্থাপিত হলেও এটি সরকারিকরন হয় ২০১৪ সনে। সরকারিকরনের প্রায় সাত বছর হলেও স্কুলের পাঠদান চলছে আগের পুরনো টিনের ছোট ঘরে। স্কুলের নামে বিগত অর্থ বছরের সরকারি কত টাকা বরাদ্ধ ছিল তা জানা যায়নি। তবে গত অর্থ বছরে স্কুলের নামে স্লিপ, ক্ষুদ্র মেরামত ও জরুরী উন্নয়ন সরকারি বরাদ্দ রয়েছে মোট সাড়ে চার লাখ টাকা। এ বরাদ্দের আংশিক টাকা দিয়ে লোক দেখানো কিছু কাজ হলেও উপজেলা প্রকৌশল অফিসের প্রাক্কলন ও বিল-ভাউচারে এ বরাদ্দের উন্নয়ন সীমাবদ্ধ। স্কুলটিতে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত কমিটি না থাকায় সরকারের সেই উন্নয়ন বরাদ্দের বিষয়টি স্থানীয় অভিভাববক ও লোকজন সকলের অজানা।
সরকারি বরাদ্দের টাকায় স্কুলের কি কাজ হয়েছে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিচয়দানকারী সুলতানা রাজিয়া জানান- স্লিপের টাকায় কোভিড-১৯ সুরক্ষা সামগ্রী ও ছয় জোড়া বেঞ্চ ক্রয় করেছেন। ক্ষুদ্র মেরামতের টাকায় বিদ্যালয়ের ফ্লোর পাকাকরণ ও ৬ জোড়া বেঞ্চ বানিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কিছু টাকা দিয়ে রেখেছেন। জরুরী উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা এখনো উত্তোলন করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এসময় সরজমিনে দেখা যায়, স্কুলের যে ফ্লোরটি পাকা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তা ইট-সুরকী ছাড়া শুধু সিমেন্টের একটি প্রলেপ। আর কোভিড-১৯ সুরক্ষা সামগ্রীগুলো রাখা হয়েছে অফিস রুমে।
স্কুলের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান- বিদ্যালয়ে বর্তমানে সুলতানা রাজিয়া নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন, তিনি মূলত সহকারী শিক্ষক। স্কুলের নামে উন্নয়ন বরাদ্দের বিষয়ে সুলতানা রাজিয়া কাউকে কোন কিছু জানান না। গোপনে বিল ভাউচার তৈরী করে স্কুলের টাকা আত্মসাত করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু রায়হান সাংবাদিকদের জানান- সুলতানা রাজিয়া বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, তিনি আনঅফিসিয়ালী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। স্লিপের ৫০ হাজার ও ক্ষুদ্র মেরামতের দুই লাখ টাকার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। জরুরী উন্নয়ন বরাদ্দের দুই লাখ টাকা এখনো উত্তোলন করা হয়নি বলে তিনি জানান।
গৌরীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন সাংবাদিকদের জানান- বরাদ্দের টাকায় বিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। কাজের কোন অভিযোগ থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।