শিরোনাম

South east bank ad

রিকসার চাকায় ঘুরছে প্রতিবন্ধী শুকুর আলী পরিবার

 প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

গোলাম মোস্তফা মুন্না, (যশোর) :

দুটি পা নেই তবুও থেমে থাকেনি শুকুর আলীর (৩০) জীবন। ভিক্ষাবৃত্তি না করে দিন রাত করছেন পরিশ্রম। যশোর শহরের রাস্তায় রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকায় পরিবারের ৪ সদস্যের জীবনের চাকা ঘুরছে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ১৬শ’ টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে হয় তাকে।

শুকুর আলী জানান, ভিক্ষাবৃত্তি অসম্মানজনক কাজ। মানুষের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা লাগে। তাই জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য রিকশার হ্যান্ডেল ধরেছি। শুকুর আলী যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।

বুধবার (৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮ টা। যশোর শহরের দড়াটানায় দেখা হয় শুকুর আলীর সাথে। রিকশার সিটের ওপর নিজের মতো করে আরেকটি আসন তৈরি করেছেন। গায়ে লাল নীল রঙের টি-শার্ট। মাথায় রয়েছে ক্যাপ। যাত্রীবেশে কাউকে দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন কাছে। বলছেন ভাই যাবেন নাকি। শুকুর আলী জন্মেছে বিকলঙ্গ হয়ে। দুটি পা বাঁকা। তার বাবা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারও সংসার চলে রিকশা চালিয়ে আয় করা অর্থে।

শুকুর আলী জানান, গরিব পিতার সংসারে জন্ম। তাও আবার বিকলঙ্গ হয়ে। লেখাপড়া করতে পারেননি। চালিকা শক্তি নেই। হাতের ওপর ভর করে কোনো রকমে চলাফেরা। অঙ্গহীন জীবনটাকে কখনো বোঝা মনে করেননি। সব সময় পরিশ্রম করেই জীবন সংসারে টিকে থাকতে চেয়েছেন। কিশোর বয়স পার হতেই নেমে পড়েন পরিশ্রমে।

যশোর শহরের লালদীঘি পাড়ে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে জুতা স্যান্ডেল বিক্রি শুরু করেন। ব্যবসা মোটামুটি ভালো হওয়ায় ১২ বছর আগে বিয়ে করেন শুকুর আলী। তার শ্বশুর বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ছুটিপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি দুই সন্তানের জনক। তারা হলো ১০ বছরের মেয়ে সোহানা খাতুন ও ১ বছর ২ মাস বয়সের ছেলে আব্দুল হাকিম। ছেলের দুটি পা তার মতো বাঁকা।

শুকুর আলী আরও জানান, জুতা স্যান্ডেল ব্যবসা ভালোই চলছিলো। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর আগে যশোর শহরের লালদিঘী পাড়ে নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে তার এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সংসারে অভাব দেখা দেয়। বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষার কথাও ভেবেছেন। কিন্তু মন সায় দেয়নি। এরপর দুটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অটোরিকশা কেনেন। নেমে পড়েন জীবিকার সন্ধানে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা আয় হয় শুকুর আলীর। এই অর্থ দিয়ে সংসারের খরচ, চিকিৎসা খরচ, মেয়ের লেখাপড়া খরচ চলে।

শুকুর আলী জানান, রিকশা চালানোর কাজ তার জন্য ঝুঁকি। কারণ পা নেই। যানজটের শহরে অন্য কোনো বাহন রিকশায় ধাক্কা দিলেই তার নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় দিনে যানজট হলেও রাতে ফাঁকা থাকে। তাই দিনের চেয়ে রাতে রিকশা চালাতে তিনি আরামবোধ করেন। কিন্তু পুলিশের কারণে তা হয়ে ওঠে না। আমি প্রতিবন্ধী জেনেও টহল পুলিশ কয়েকদিন আমার রিকশার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।

এক প্রশ্নে শুকুর আলী জানান, ৬ শতক জমির ওপর তাদের বসবাস। এছাড়া আর কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। প্রতি বছরে সরকার থেকে দুই বারে তাকে ৪৫শ’ টাকা ভাতা দেয়া হয়। আর তেমন কোনো সুবিধা পান না। তাতে দুঃখ নেই। কারো কাছ থেকে কিছু চেয়ে নিতে চান না। জীবনের সাথে সংগ্রাম করেই বাকি জীবন পার করতে চান শুকুর আলী।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: