শিরোনাম

South east bank ad

প্রান্ত ফিলিং স্টেশনে চলছে ডিজিটাল কারচুপি

 প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি):

রাজাপুরের বাগড়ি হাট সংলগ্ন বিশ্বরোডের উত্তর পাশেই অবস্থিত প্রান্ত ফিলিং স্টেশন। সেখানে মটোরসাইকেলের তৈল নিতে গেলে ২শ টাকার তেল চাওয়া হয়। সরবরাহকারী কর্মচারী ডিজিটাল মিটারে চাপ দিয়ে তৈল দিতে শুরু করে। ২.৩২ লিটার হবার পরেই বন্ধ করে তেল দেয়া। কিন্তু অন্যান্য পাম্প থেকে তেল নিলে ২.৩৩ লিটার পরিমাণে তেল পাওয়ায় যায়। ২/১লিটার তেল নিলে বিষয়টি খেয়াল করার মতো থাকে না। কিন্তু বেশি পরিমাণে তৈল নিলে শেষ পর্যন্ত ঘাটতি দেখা যায়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রান্ত ফিলিং স্টেশনে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করে জানান, “২শ টাকার পেট্রোল নিলে আমাদের পাম্পে পায়েন্টের পরেও ৩টি সংখ্যা থাকে। যার কারণে আপনি পেয়েছেন ২.৩২৬ লিটার। কিন্তু একই মালিকানাধীন প্রান্ত ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি ইউশা ফিলিং স্টেশন পাম্পে পেট্রোল নিলে তারা দেয় ২.৩৩ লিটার।” এভাবেই অভিনব কায়দায় ঝালকাঠির রাজাপুরের প্রান্ত ফিলিং স্টেশন পেট্রোল পাম্পে ওজন পরিমাপে চলছে ডিজিটাল কারচুপি। এই কারচুপির কারণে সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা বা যানবাহন মালিকরা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গড়ে প্রতিটি পেট্রোল পাম্প থেকে প্রতি ৩০ লিটারে প্রায় ৫শ’ মিলিলিটার তেল ওজন কাচুপির মাধ্যমে চুরি করা হচ্ছে। অথচ পরিমাণ অনুয়ায়ী ৫ মিলিলিটার বেশি অথবা কম যাওয়ার কথা। তেল পরিমাপের মেশিনে (গিলবার্কো ডিসপেন্সিং ইউনিট) নিয়মিত এই কারচুপি হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তা বা পরিবহন মালিক এই ডিজিটাল কারচুপির টিকিটিও কখনও ধরতে পারেন না। বুঝতেও পারেন না। যার কারণে যানবাহন মালিক সঠিক ওজন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই ডিসপেন্সিং ইউনিটে বিএসটিআই, তেল কোম্পানি, পাম্প মালিকদের উপস্থিতিতে ওজন পরিমাণ নির্ধারণ করে বিএসটিআইয়ের সিল দেয়া হয়। সিল দেয়ার পর অনেক পাম্প মালিক এই মেশিনের পয়েন্ট ঘুরিয়ে দেন। ফলে তেল বিক্রির সময় দ্রুত কাউন্ট হলে ওজনে তেল কম যায়। এছাড়া বিএসটিআইয়ের সিল করা এই মেশিন ছাড়া অনেকে অবৈধভাবে সিলবিহীন মেশিন ব্যবহার করে থাকে। অথচ এ ধরনের কার্যক্রমে ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তারা জানায়, গড়ে প্রতিদিন একটি পাম্প ৩৬ হাজার লিটার তেল বিক্রি করে থাকে। এই কাচুপির মাধ্যমে প্রতিদিন তারা ২ হাজার লিটার ওজনে কম দিচ্ছে।

আধুনিক সভ্যতার অন্যতম ধারক-বাহক হলো জ্বালানি তেল। গৃহস্থালী কাজ থেকে শুরু করে সেচকাজ, বিদ্যুত উৎপাদনসহ সব কাজেই এই জ্বালানি তেল ছাড়া একদিনও চলে না। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলে এই তেলের ওপর। প্রতিদিন তেল ছাড়া এসব পরিবহনের চাকাও ঘোরে না। ঝালকাঠির বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত তেল পাম্প থেকে প্রতিদিন যানবাহনগুলোর তেল সংগ্রহ করেই চলতে হয়। এছাড়া প্রতিটি সড়ক মহাসড়কের পাশের যানবাহনের তেলের জন্য রয়েছে পাম্প।

বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, তেল পাম্পগুলোর মালিক, তেল কোম্পানি এবং বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ওজন বা পরিমাপ ঠিক করে দেয়া হয়। যানবাহনের তেল পরিমাপের জন্য তেল পাম্পগুলোতে এক ধরনের পিনিয়াম মেশিন বা তেল পরিমাপক মোটর ব্যবহার করা হয়। তিনপক্ষের উপস্থিতিতে চুক্তির মাধ্যমে পরিমাপক ঠিক করা হয় গিলবার্কো ডিসপেন্সিং ইউনিটে। একবার পরিমাপ করে দেয়ার পর মেশিনের বিএসটিআইয়ের সিল দেয়া থাকে। এমনভাবে এটা নির্ধারণ করা হয় যাতে ডিজিটাল পদ্ধতির তেল পরিমাপের সময় ১ লিটারে বড়জোর ৫ মিলিলিটার তেল বেশি যাবে। আথবা কখনও এই পরিমাণ তেল কম যাবে। এর কমবেশ কখনো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু চুক্তির পরেই পাম্প সংশ্লিস্টরা ডিসপেন্সিং ইউনিট (তেল পরিমাপক) মেশিনের পয়েন্ট ঘুরিয়ে ওজন পরিমাপে কারচুপি করে।


বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, এটা এমন এক ডিজিটাল কারচুপি যা অভিযান চালিয়েও প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। দেখাগেছে, একটি পাম্পে অভিযান চালিয়ে ওজন কারচুপি পাওয়া গেল। কিন্তু এর আশপাশে আবার অভিযান চালানো হলে দেখা যায় ওজন ও পরিমাণ ঠিক রয়েছে। একটি অভিযানের সময় আশপাশের পাম্পগুলোতে বার্তা চলে যায়। খবর পেয়ে তারা মেশিনের কারচুপি আবার ঠিক করে। কিন্তু অভিযান থেমে গেলে আবারও শুরু হয় কারচুপি। নির্ধারিত ওই মাপে তেল ওজন পরিমাপের কম বেশি হয় না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই চুক্তির লঙ্ঘন করা হয়। যা আইন অনুযায়ী অপরাধ। কিন্তু বেশিরভাগ তেল পাম্প অসাধু কাজের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ওজন পরিমাপে কম দিচ্ছে। কিন্তু ভোক্তা প্রতারিত হলেও কখনও তিনি বুঝতে সক্ষম হন না।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: