বগুড়ার ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন!
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার শেরপুরে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির পর এবার সেখানে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খননযন্ত্রের মাধ্যমে ফসলি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি লাভলু মিয়া। এতে করে আবাদি জমির তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে আশপাশের ফসলি জমি, একাধিক রাস্তা-ব্রিজ ও অসংখ্য বসতবাড়ি ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তাই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবিও জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় ফসলি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়াসহ পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারি গ্রাম। গ্রামটির পাশেই ফসলি মাঠ। আর এই মাঠের অন্তত নয় বিঘা জমির মাটি কেটে বিক্রি করেন একই ইউনিয়নের শুভগাছা গ্রামের মাটি-বালু ব্যবসায়ী বলে পরিচিত লাভলু মিয়া। অবশ্য এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও গুণতে হয়েছে তাকে। সরকারি অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মাটি-বালু বাণিজ্যের কারণে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিনের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালান। এসময় ফসলি জমির মাটি না কাটতে তার কাছ থেকে মুচলেখা নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পঞ্চাশ হাজার টাকার জরিমানাও করা হয়। এরপরও থামানো যাচ্ছে না ওই মাটি-বালু ব্যবসায়ীকে। এমনকি বিগত তিন-চারদিন ধরে ওইসব ফসলি জমির মাটি বিক্রির পর এখন বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে অনেকটা নির্বিঘেœই বালু উত্তোলন করে চলেছেন তিনি।
রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করার কারণে ফসলি জমিগুলো বিল ও পুকুরে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে দুইটি ড্রেজার বসানো হয়েছে। আর সেই খননযন্ত্রের মাধ্যমেই দিনে-রাতে সমানতালে বালু তোলা হচ্ছে।
এসময় কথা হয় স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা হায়দার আলী, সোলায়মান আলীসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা বলেন, ফসলি জমির প্রথমে মাটি কাটা হলো। এখন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে জমির তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় আমাদের আশপাশের জমিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া মাটি-বালু পরিবহনের কাজে ভারি যান (ড্রাম ট্রাক) চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কটির অবস্থা খুবই করুণ। এমনকি সড়কের মাঝে থাকা দুইটি ব্রিজও ভেঙে গেছে। গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও জানান।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, সব মহলকে ম্যানেজ করেই ফসলি জমি থেকে মাটি-বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বালুদস্যু লাভলু মিয়া। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ফলে প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি বেশ দাপটের সঙ্গেই অবৈধ মাটি-বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, এভাবে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও কারো পক্ষে প্রতিবাদ করার সাহস হচ্ছে না। কারণ প্রতিবাদ করলেই ওই ব্যক্তিকে হুমকি-ধামকিসহ নানা হয়রানি করা হয়। এ অবস্থায় কোনো কূল-কিনারা ভেবে পাচ্ছেন না তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত লাভলু মিয়া প্রথমে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে। কিন্তু তার বক্তব্য জানতে চাইলে এড়িয়ে যান। এমনকি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নেই বলেও দাবি করেন। তবে যেসব ফসলি জমি থেকে বালু তোলা হচ্ছে সেসব জমি তার নিজের বলে স্বীকার করেন। কিন্তু ওইসব জমি থেকে কে বা কারা বালু তুলছেন সেটি তার জানা নেই বলে ক্ষোভ জানিয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তাই খোঁজখবর নিয়ে এ ধরণের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অবৈধ মাটি-বালুর পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও বলেন এই নির্বাহী কর্মকর্তা।