নড়িয়ায় পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবককে খুনের অভিযোগ
মোঃ রোমান আকন্দ, (শরীয়তপুর) :
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর মালতকান্দি গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শনিবার (২৮ আগস্ট) গভীর রাতে এক যুবককে কুপিয়ে ও বোমা মেরে খুন করে আন্দারমানিক বাজারের ব্রীজের উপর ফেলে রেখেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। পুলিশের ধারনা প্রতিপক্ষের লোকেরা বোমা মেরে গুলী করে ও ধারালো অস্ত্রদিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাজা ককটেল, শর্টগানের গুলি ও গুলির খোশা উদ্ধার করেছে।এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নড়িয়া থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রতিপক্ষ দাদন মীরমালত বলেন, নাহিদ ও মাইকেল খুনের মামলা থেকে বাঁচার জন্য চেয়ারম্যান জাকির গাজির লোকেরা আমাদেরকে ঘায়েল করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে আলমগীরকে খুন করেছে।
নিহতের মামা মনির মীরবহর ও নড়িয়া থানা সূত্রে জানাগেছে, নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী জাকির ও একই এলাকার গোলাম মাওলা মীরবহর এর মধ্যে স্থানীয় অধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ এলাকায় একাধিকসংঘর্ষ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে।
গত কয়েকদিন পূর্বে গোলাম মাওলা মীরবহর সমর্থক সুফিয়ান মীরবহর জাকির গাজি সমর্থক আলমগীর মীরবহরকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে আসছিল। সুফিয়ান বলছে আলমগীরকে খুন করে প্রয়োজনে ২০ লাখ টাকা জরিমানা দিবে। এ ঘটনার ১০/১৫ দিন পরেই আলমগীর মীরবহর এর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হলো। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত আলমগীর মীরবহরের ভাই জাহাঙ্গীর এ প্রতিবেদককে জানান শনিবার সন্ধায় আলমগীর মীরবহর(৩৪) বাড়ি থেকে টর্চ লাইট ও মোবাইল নিয়ে স্থানীয় মহিষখোলা বাজারে চা খেতে যায়। রাত অনুমান ৯টা পর্যন্ত সে ঐ বাজারে ছিল । এর পরে সে রাতে বাড়ি ফিরেনি। রাতে তার মোবাইলে বার বার ফোন দিলে ও ফোন রিসিফ করেনি। তাকে কোথা ও খুজে পায়নি। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টায় স্থানীয় লোকজন ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় আন্ধার মানিক বাজারের নিকট ব্রীজের উপর আলমগীর মীরবহর এর রক্তমাখা ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পেয়ে নড়িয়া থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। এ সময় পুলিশ ১টি শর্ট গানের তাজা গুলি, ৩টি গুলির খোশা ২টি তাজা ককটেল ও বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত উদ্ধার করেছে। নিহত আলমগীর মীরবহর এর গায়ে বোমার আঘাত ও বাম পাশে হাতের নিচে একটি ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা ধারনা করছেন তাকে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের লোকরা ধরে নিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে গেছে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় নড়িয়া থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকেরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই জাহাঙ্গীর মীরবহর বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুফিয়ান মীর বহর আমার ভাইকে খুন করার জন্য কয়েকদিন পূর্বে হুমকি দিয়েছিল। ওরাই আমার ভাইকে খুন করেছে।আমি এর বিচার চাই।
প্রতিপক্ষ দাদন মীরমালত বলেন, আমাদের পক্ষের নাহিদ ও মাইকেল খুনের মামলা থেকে রক্ষা পেতে চেয়ারম্যান জাকির গাজির ভাতিজা সম্রাটের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা গরীব ও সহজ সরল যুবক ছেলেটিকে খুন করে আমার বাসার কাছে ব্রীজের উপর ফেলে রেখে যায়। শনিবার রাত আনুমানিক ৪টায় আন্দারমানিক বাজারে আমার মার্কেট ও বাসায় বোমা মেরে ত্রাস সৃষ্টি করে।এ সময় হামলাকারীরা দোকানপাট ভাংচুর করেছে।
নড়িয়া থানার ওসি অবনী শংকর কর বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। কে বা কারা খুন করেছে তা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল এস এম মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। লাশের পাশে থেকে শর্টগানের একটি তাজা গুলি, ৩টি গুলির খোশা ২টি তাজা ককটেল ও বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত উদ্ধার করেছে। ধারনা করা হচ্ছে, তাকে গুলি করে বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।