শিরোনাম

South east bank ad

প্রায় ৫০ বছর পর প্রাণ ফিরে পেল ঐতিহ্যবাহী বৈরাগীর খাল

 প্রকাশ: ২১ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মেহের মামুন, (গোপালগঞ্জ) :

গোপালগঞ্জ শহরের এক সময়ের প্রাণকেন্দ্র থানাপাড়ার পুলিশ ভবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈরাগীর খাল। প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটির উত্তরদিকটার শুরু থানাপাড়া হয়ে মধুমতি লেকের (মরামধুতি) থেকে আর দক্ষিণদিকটায় মোহনায় মিশেছে মিয়াপাড়া ও নিচুপাড়ার মধ্য দিয়ে চেচানিয়াকান্দি হয়ে পাঁচুড়িয়া খালে।

একসময় এ খাল দিয়ে চলাচল করতো নৌকা-ট্রলার; ছিল জোয়ার-ভাটা। এ খালের মাছ শিকার করে অনেকের জীবিকা নির্বাহ হতো। আশপাশের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন তো মিটতোই; এমনকি পাশর্^বর্তী বিশাল বিলাঞ্চলের কৃষিজমিতেও সেচের উৎস্য ছিল এ বৈরাগীর খাল।
প্রায় ৫০ বছর পরে প্রাণ ফিরে ফেল গোপালগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী বৈরাগীর খাল। সে খালে এখন বইছে জোয়ার-ভাটার পানি, চলছে নৌকা। দীর্ঘদিন পর হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন শহরের একটি বৃহৎ অংশের জনগোষ্ঠী। দুর্গন্ধ ও ময়লা আবর্জনাযুক্ত বদ্ধ জলাশয়ের স্থলে এখন সেখানে পানি প্রবাহ দেখে আনন্দিত সবাই।

কিন্তু স্বাধীনতার পরে থানাপাড়া এলাকায় এ খালের উপর রাস্তা নির্মাণের কারণে বিছিন্ন হয়ে যায় মধুমতি নদীর এ শাখা-খালটি। মাঝে দু’বার বন্যায় ওই রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে পানি প্রবাহ হলেও পুনরায় সেখানে রাস্তা নির্মাণের কারণে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় জোয়ার-ভাটা; খালটি পরিণত হয় বদ্ধ জলাশয়ে। এরপর ধীরে ধীরে বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনার স্তুপ আর সুয়ারেজ সংযোগের কারণে একসময় এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরিণত হয় শহরের ডাস্টবিনে। তাছাড়া খাল দখলের প্রতিযোগিতায় কেউ কেউ খালের জায়গা ভরাট করে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন। ফলে অনেক জায়গায় খালটি তার প্রশস্ততাও হারিয়েছে। কিছুদিন আগ-পর্যন্তও এটি ছিল গোপালগঞ্জ শহরের একটি দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা; মশা-মাছির আতুরঘর। দুর্ভোগের শেষ ছিল না শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এ খালের দু’পাড়ের বাসিন্দাসহ একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গোপালগঞ্জ পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় থানাপাড়া এলাকায় রাস্তা কেটে ব্রীজ নির্মাণ করা হয় এবং কয়েকটি অবৈধ-দখল মুক্ত করে ভরাট হয়ে যাওয়া ময়লা-আবর্জনা তুলে ফেলে মধুমতি লেকের সঙ্গে পুনরায় খালটির সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। খালটিতে এখন বইছে নতুন প্রবাহ। চলছে জোয়ার-ভাটা।

বহুবছর পর খালটিতে প্রবাহ শুরু হওয়ায় স্বস্থি ফিরেছে সবার। ভেঙ্গে গেছে মশা-মাছির আতুরঘর। শুরু হয়েছে নৌকা চলাচল। কেউ মাছ ধরছেন, কেউ গোসল করছেন, অনেকে নিত্য-প্রয়োজনেও ব্যবহার করছেন ওই খালের পানি। খালের পানিতে শুরু হয়েছে হাঁসের অবাধ বিচরণ। ফিরে এসেছে মনোরম পরিবেশ।

তবে, খালটির দু’পাড় ঘেঁষে এখনও রয়েছে বেশকিছু অবৈধ দখল; একারণে পানির প্রবাহও অনেকটা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। খালের কয়েকটি স্থানে পাড় ভেঙ্গে পড়ারও আশংকা রয়েছে। তাই এলাকার মানুষের দাবি উঠেছে - অবৈধ-দখল উচ্ছেদপূর্বক দু’পাড় ব্লক-বাঁধাই ও পাঁয়ে চলা পথ করে খালটিকে যদি আরও সৌন্দর্য্যমন্ডিত করা যায়, তাহলে এটি শুধু এলাকার সৌন্দর্য্যই বর্ধন করবে না; বরং গোটা গোপালগঞ্জ শহরের স্বাস্থ্যগত পরিবেশেরও ভারসাম্য রক্ষা হবে।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পরিবেশকে আমাদেরকে সবসময় বিবেচনায় আনতে হবে। সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও গোপালগঞ্জ পৌরসভার সহযোগিতায় আপাতত: রাস্তা কেটে খালটিতে প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে শহরের ভিতরে যেসব খাল রয়েছে সেগুলোর ডিমার্কেশনের কাজ আমরা শুরু করেছি। কাজটি সম্পন্ন হলে দ্রুতই বৈরাগীর খালের দু’পাড়ের অবৈধ দখল সরিয়ে খালটিকে পুনরুজ্জ্বীবিত করা হবে।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু বলেছেন, আমাদের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নির্দেশে, জেলা প্রশাসনের তদারকিতে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় রাস্তা কেটে ব্রীজ করে খালটির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এতে গোপালগঞ্জবাসী স্বস্তি পেয়েছে। খালের পাড় থেকে কিছু অবৈধ দখল সরানো হয়েছে। অতিদ্রুত জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাকী অবৈধ দখলদারদেরও সরিয়ে ফেলা হবে। ইতোমধ্যে খালের কিছু অংশে দু’পাড় ব্লক-বাঁধাই করা হয়েছে। পৌরবাসীর স্বার্থে সম্পূর্ণ অংশে ব্লক-বাঁধাই করে খালের দু’পাড়ে পাঁয়ে চলা পথ নির্মাণসহ খালটির সৌন্দর্য্যবর্ধনের পরিকল্পনাও রয়েছে এবং এজন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: