রাসিকের সীমানা বৃদ্ধিতে বাঁধা হতে পারে দুই পৌরসভা
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
রাজশাহী শহরকে বলা হয় গ্রীণ, ক্লিন, হেলদিসিটি। শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত এই শহরকে আরও বেশি চমকপ্রদ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন বর্তমান নগরপিতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। পাশাপাশি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) আয়তন বাড়াতে সিটি মেয়র উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে আয়তন বেড়ে হবে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার। তবে আয়তন বাড়াতে বড় বাধা হতে পারে সম্ভাব্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার দুইটি পৌরসভা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- আয়তন বাড়াতে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন, তাতে দুটি পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ আছে। স্থানীয় সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরা সিটির ভিতরে আসতে চান না। বিশেষ করে ঘোর আপত্তি রয়েছে দুই পৌরসভা নওহাটা ও কাটাখালি পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের। তারা মামলার পরিকল্পনাও নিয়েছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, নাগরিক সেবার পরিধি বাড়াতে ও পরিকল্পিত নগরায়নে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আয়তন তিনগুণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরীর আয়তন ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে হবে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার। আগামী দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে বাড়তি অংশ যুক্ত হবে বর্তমান আয়তনের সঙ্গে। এ জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেয়র আরও বলেন, ‘কেবল ইট-কাঠের জঞ্জাল নয়, সবুজ ও পরিকল্পিত নগরী গড়তে চাই। যেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি থাকবে সবুজ মাঠ।’
তবে আয়তন বাড়াতে বড় বাঁধা হতে পারে পরিকল্পনায় থাকা এলাকার দুই পৌরসভা। ওই পৌরসভার নির্বাচিত মেয়রদের দাবি, সিটি করপোরেশন বর্তমান আয়তনেই সেবার মান নিশ্চিত করতে পারেনি। পৌর এলাকার জনগণরাও সিটি করপোরেশনের মধ্যে যেতে চান না।
পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার বহু জায়গায় এখনো কাঁচা রাস্তা। সুপেয় পানির ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। সেখানে নতুন করে আয়তন বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কাঁটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী জানান, তার এলাকার মানুষ সিটি করপোরেশনের মধ্যে যেতে চায় না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষমতা এখনো হয়নি তার পৌর এলাকার মানুষের। যদি সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তিনিসহ আদালতের আশ্রয় নেবেন দুই পৌর মেয়র।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী মহানগরীর মধ্যে আগে চারটি থানা ছিল। বর্তমানে থানা বেড়ে হয়েছে ১২টি। মূলত মহানগর পুলিশের আয়তন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের এলাকা বাড়ানোর প্রস্তাব গেছে মন্ত্রণালয়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। গত বছরের জানুয়ারিতে কৃষি বিভাগসহ তিনটি বিভাগ ইতিবাচক সাড়া দিয়ে সীমানা বাড়ানোর পক্ষে মতামত দেয়। তারপরেও আটকে আছে রাসিকের সীমানা বাড়ানোর প্রস্তাবনা।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সুব্রত পাল জানান- যেভাবে মানুষ বাড়ছে, তাতে নগরীর আয়তন বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সীমানা সমস্যা তুলে ধরে এমন উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করেন। ফলে সিটি মেয়রের উচিত এখনই এই সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে উদ্যোগী হওয়া। তিনি আরও বলেন, ‘সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের যেহেতু রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও প্রভাব আছে, ফলে এখনই রাজনৈতিক সমঝোতাটি করে ফেলা উচিত। স্থানীয় সরকারের ওই জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের গুরুত্বটি বোঝাতে লিটনের উচিত এখন থেকে উদ্যোগী হওয়া।’