ময়মনসিংহ বিভাগে এপর্যন্ত করোনায় মৃত্যু ৫ শতাধিক
এইচ এম জোবায়ের হোসাইন
করোনাভাইরাসের হটসপট এখনও ময়মনসিংহ বিভাগ। কিছুদিন কম থাকলেও ইদানিং আবারো আক্রান্ত, মৃত্যু, ঝুঁকি, আতংক এই বিভাগে সবই বাড়ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েও বাইরে ঘুরাফেরা করায় বেশী ছড়াচ্ছে করোনা। সরকার বাইরে সকলকে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করলেও অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পড়ছে না। বিভাগের ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা ও শেরপুরসহ চার জেলায় এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫০৩জনের মৃত্যু হয়েছে। গত গত ১৪ জুলাই’২০২১ পর্যন্ত ২লাখ ০৯ হাজার ৩৮২টি করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তন্মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩২ হাজার ৩৩৭জন। আক্রান্তের হার ১৫.৪৪ শতাংশ। এছাড়াও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপতালের করোনা ইউনিটে গত আগষ্ট থেকে ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২৫৬জনের মারা গেছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ মোঃ শাহ আলম জানান, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত জেলা ওয়ারী করোনার নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহে মোট ১২২,৩৬৯টিনমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৮৯৯৫জনের, হার ১৫.৫২ শতাংশ এবং মৃত্যু ২২২জন। নেত্রকোণায় মোট ২৮,৪৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৩১৭জন, হার ১৫.১৫শতাংশ এবং মৃত্যু ১০৯জন। জামালপুরে মোট ৩৫,০৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪,৮১৬জন, হার ১৩.৭২শতাংশ এবং মৃত্যু ৯১জন। শেরপুরে মোট ২৩,৪৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪,২০৯জন, হার ১৭.৯১শতাংশ এবং মৃত্যু ৮১জন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মমেকহা) করোনা ইউনিটে মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, মমেকহা কোভিড ইউনিটে কোন সিট খালি নেই এবং আইসিইউতে কোন বেড খালি নেই। এমনকি ফ্লোরে পর্যন্ত রোগী রাখার মত অবস্থা নেই। ন্যূনতম চিকিৎসা ও অক্সিজেন দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।
ইদানিং ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগ থেকেও রোগীরা এখানে ভর্তির জন্য আসছেন। এর ফলে একটি মমেক হাসপাতালের উপর অস্বাভাবিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। তাই, কোভিড সুচিকিৎসার প্রয়োজনে নিকটস্থ উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে যোগাযোগ করার আহবান জানিয়েছেন মমেকহা কর্তৃপক্ষ। উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিদ্যমান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল প্রয়োজন মনে করলে তাদের লিখিত রেফারেলসহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার আহবান জানান।
অকারণ ঘোরাঘুরি, শপিংসহ সবকিছু খুলে দেয়ার প্রেক্ষিতে অবাধ চলাচলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ জানান। গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য চলছে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা বাইরে ঘুরাঘুরি করার প্রেক্ষিতে করোনা সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। দ্রুত আক্রান্তের লাগাম ধরে টানতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগণকে বাধ্য করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান।
বিএমএ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ মতিউর রহমান ভূইয়া জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে ময়মসনসিংহ বিভাগ। আক্রান্ত, সনাক্ত বা মৃত্যু কোনটাই কমছেনা। মমেক হাসপাতালে অতিরিক্ত কোভিড ১৯ রোগীর চাপে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সংক্রমণের এই ধারা অব্যাহত থাকলে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দুস্কর হবে। সংক্রমণ কমাতে দরকার উপসর্গ যাদের আছে তাদের দ্রুত আইসোলেসনে নেয়া, পরীক্ষা করা এবং যারা সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া যা চরমভাবে অবহেলিত । এন্টিজেন টেস্ট বাড়াতে হবে, পাঁচ সাত দিন পরে রিপোর্ট প্রদান অর্থবহ নয় যা অধিক সংখ্যক পিসিআর করতে যেয়ে হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আরও খারাপ পরিস্থিতি আসার আগেই এ ব্যবস্থা নিতে হবে, রাতারাতি আইসিইউ বা শয্যা সংখ্যা বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। আমরা অনেক সময় পেয়েছিলাম,কাজে লাগাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। তিনি সবাইকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্য বিধি মানতে আহবান জানান।