দুর্গাপুরে সামুদ্রিক গাংচিল উদ্ধার
এস.এম রফিক, (দুর্গাপুর) :
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সামুদ্রিক আহত একটি গাংচিল উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের শিবগঞ্জ এলাকার একটি বাসা থেকে এটিকে উদ্ধার করা হয়। বড় আকৃতির এই পাখি মূলত কালো মাথা গাংচিল। পাহাড়ি এলাকায় এর আগে তেমন একটা দেখা মেলেনি তাই সবার কাছেই এটি অচেনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে সোমেশ্বরী নদীর পানি। বুধবার রাতে নদীর ঘরের পানিতে ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে পাখিটিকে পানিতে ভেসে আসতে দেখেন এক ব্যক্তি (প্রকাশে অনিচ্ছুক)। রাতেই তীব্র স্রোত কাটিয়ে পাখিটি উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান। সকালে স্থানীয় রয়েল মুন্সি নামের আরেক বাসিন্দাকে নিয়ে পাখিটিকে দুর্গাপুরে বাজারে বিক্রি করতে আসেন তারা।
শহরের তেরি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পাখিটিকে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সদস্যদের জেরার মুখে তাৎক্ষণিক পাখি নিয়ে পালিয়ে যান তারা। স্বেচ্ছাসেবকরা স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করলে পাখি উদ্ধারে শুরু করা হয় অভিযান।
এদিকে পাখিটিকে নিয়ে সোমেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশিদ মড়লের কাছে ১৫শত টাকায় বিক্রি করে গা ঢাকা দেন পাখি বিক্রেতা। পাখিটিকে খোঁজ করার খবর স্থানীয় কাউন্সিলর জানতে পেরে উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন করে পাখিটি তার হেফাজতে রয়েছে বলে জানান। বিকেলে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা পাখিটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান, প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম, একাডেমিক সুপারভাইজার নাসির উদ্দিন সহ স্বেচ্ছাসেবকরা।
স্থানীয় কাউন্সিলর রাশিদ মড়ল প্রতিনিধিকে জানান, আজ দুপুরের পর হাসপাতাল থেকে পায়ের ড্রেসিং করে বাড়ি ফেরার পথে সোমেশ্বরী নদীর ঘাটে এক ব্যক্তির হাতে পাখিটিকে দেখতে পাই। প্রথমদিকে এটি বালিহাঁস ভেবে বিক্রেতাকে দাম জিজ্ঞাসা করি। শুরুর দিকে বিক্রেতা প্রায় তিন হাজার টাকার উপরে এর দাম চাইলেও অনেক দরদাম করে ১৫শ টাকায় পাখিটিকে কিনে বাড়িতে নিয়ে আসি।
সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠনের সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল জানান, কালো মাথার এই গাংচিল এই পাখিটিকে নিয়ে বিক্রেতা বাজারে ঘোরাঘুরির খবর শুনতে পেরে আমরা তাৎক্ষণিক পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ শুরু করি। এক পর্যায়ে আমরা পাখিটিকে দেখতে পেয়ে বিক্রেতা কৌশলে অপর আরেক ব্যক্তিকে দিয়ে এটি অন্য স্থানে পাঠিয়ে দেয়। পরে আমরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দুর্গাপুর থানার ওসি’র সাথে যোগাযোগ করলে পাখি উদ্ধারের জন্য তারা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিকেলে আমরা স্থানীয় কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে সামগ্রিক এই পাখিটি উদ্ধার করে নিয়ে আসি। পাখিটির অবস্থা খুবই খারাপ। বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং পাখিটি দাঁড়াতে পারছে না। আমরা একটি প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এর সেবা-যতœ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এটি সুস্থ হলে আমরা পাখিটিকে যথাযথ স্থানে অবমুক্ত করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব-উল-আহসান জানান, দুপুরের দিকে আমরা জানতে পারি একটি অচেনা পাখি নিয়ে দুজন ব্যক্তি বাজারে বিক্রির জন্য ঘোরাঘুরি করছে। জানার পরপরই তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি এবং পাখিটি উদ্ধারে অভিযান শুরু করি। বিকেলের পাখির সন্ধান পাওয়ার পর সামুদ্রিক এই গাংচিল পাখিটিকে উদ্ধার করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর তত্ত্বাবধানে দেয়া হয়। তারাই এটির সেবা-যত্ন করছেন এবং পাখিটি পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় এটি অবমুক্ত করা হবে।