চেয়ারম্যানকে বাসায় গিয়ে টিকা দেয়া কর্মচারীকে শোকোজ
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না তার সরকারি বাসায় বসে করোনার টিকা নেয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া তার বাসায় গিয়ে যিনি টিকা পুশ করেছেন তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মচারি। গত মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) একজন কর্মচারি হয়ে বাসায় গিয়ে কেন চেয়ারম্যানকে করোনার টিকা দিয়ে আসলো সেজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। বুধবার (১১ আগস্ট) তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার।
তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারি কোনোভাাবেই টিকা পুশ করতে পারেন না। এছাড়া আইনত তিনি কোনোভাবেই উপজেলা চেয়ারম্যানকে তার বাসায় গিয়ে টিকা দিতে পারেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করার এখতিয়ার আমাদের নেই কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশ্ন করতে পারি। তাই আমরা জানতে চেয়েছি কেন তিনি এই কাজ করেছেন। এজন্য তাকে শোকজ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে- তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়িতে করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইজন কর্মী গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বাসভবনে যান। বাড়ির গেটের বাইরে গাড়ি রেখে ভেতরে গিয়ে তাঁরা টিকা দিয়ে আসেন। উপজেলা চেয়ারম্যানকে টিকা পুশ করেছেন নিশান ম-ল নামের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মচারী। তাঁর পদবি ‘পোটার’। তিনি টিকার বাক্স পরিবহনের দায়িত্বে থাকেন। ওইদিন টিকা দেওয়ার পর চেয়ারম্যানকে টিকা দেয়ার সেই ছবিটি মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যেরও সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর ফেসবুক থেকে ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদেও আছেন।
বাসায় স্বাস্থ্যকর্মী ডেকে টিকা নেয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, তিনি প্রথম ডোজ টিকা হাসপাতালে গিয়েই নিয়েছেন। জরুরিভাবে তাঁর ঢাকায় যাওয়ার দরকার। হাসপাতালে গেলে বেশি সময় লাগবে। তাই তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। তিনি তারপরেই বাসায় স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’ ‘জরুরি কারণে’ না বুঝে এভাবে টিকা নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী না হওয়ার সত্ত্বেও টিকা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে নিশান ম-ল বলেন, তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে টিকাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি টিকা দিয়েছেন। তা ছাড়া গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে তার এক মাসের প্রশিক্ষণ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাঁসদাক বিষয়টি স্বীকার বলেন, ‘এক অর্থে এভাবে টিকা দেওয়াটা অনিয়ম হয়েছে। তবে যে কর্মচারির ছবি ভাইরাল হয়েছে আমি তাকে টিকা দেয়ার জন্য পাঠাইনি। দায়িত্ব স্বাস্থ্যকর্মী যিনি টিকা দেন আমি তাকেই পাঠিয়েছিলাম। তবে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে তা আমিও খতিয়ে দেখবো। জরুরি কাজে আমি ঢাকায় এসেছি। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এব্যাপারে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে চিঠিটি হাতে পেলে জানতে পারবো আসলে সেখানে কী বলা হয়েছে।’