শিরোনাম

South east bank ad

করোনায় ভালো নেই বেদে সম্প্রদায়

 প্রকাশ: ১১ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

শেখ সাঈদ আহম্মেদ সাবাব, (শেরপুর) :

শেরপুরে বসবাসরত ভাসমান বেদেপল্লির পরিবারগুলো ভালো নেই। লকডাউনের কারণে গ্রামে-গঞ্জে ঠিকমতো ঘুরতে না পারায় পরিবারগুলোর রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় আর্থিক সহযোগিতাও পাচ্ছে না তারা। পাচ্ছেনা করোনাকালীন প্রনোদনাও। এ জন্য তারা রয়েছে বিপাকে।

শেরপুরের ব্রক্ষপুত্র সেতু সংলগ্ন আব্দুস সামাদ গরুর হাটের পাশে ইউক্যালিপটাস বাগানে বসবাস করছে বেদেপল্লির ৩০ টি পরিবার। এছাড়াও জেলার অন্যান স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরো প্রায় ৭০টি পরিবার। সবমিলিয়ে শতাধিক বেধে পরিবারের খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

নারী বেদেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাপ দেখিয়ে দাঁতব্যথা সারানো, দাঁতের পোকা সারানো ও তাবিজ, মাধুলি, শিকড়-বাকড় বেচে, শিংগা লাগানোসহ বিভিন্নভাবে রোজগার করতেন। আর তাদের পুরুষ সঙ্গীরা গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে সাপ, বেজি ও বানরের খেলা দেখিয়ে, যাদু খেলা এবং শারীরিক নানান কসরত দেখিয়ে কিংবা ওষুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

কিন্তু শেরপুর জেলায় করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় প্রশাসন হাট-বাজারে লোক সমাগম নিষিদ্ধ করেছে। চলছে লকডাউনও। তাই এখন সাপের খেলা বা বানরের খেলা ও তাবিজ বিক্রির মজমা বসাতে পারছে না তারা। বাড়ী বাড়ীও যেতে পারছে না তারা। এতে তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। আর এতে বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে বেঁচে আছে তারা। পাখি শিকার করে তার গোস্ত খাওয়াসহ নানাভাবে দিন চলছে তাদের।

বেদে কন্যা কেয়া রাণী বলেন, শেরপুরে চলমান লকডাউন ছাড়াও অনেক দিন ধরেই হাট-বাজারে লোক সমাগম নিষিদ্ধ রয়েছে। তাই এখন সাপ ও বানরের খেলা এবং তাবিজ বিক্রিও করা যাচ্ছেনা। হাট বাজার ছাড়াও গ্রাম গঞ্জে মজমা বসাতে গেলেও পুলাপান ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আমরা নিজেদের পেটের জন্য তিনবেলার খাবার যোগাড় করতে পারছিনা এখন।

আরেক বেদে কন্যা নার্গিস বলেন, ‘আমাগো তো কোনো জাগা-জমি নাই। যেহানে পারি সেহানেই তাহি। কামাই না অইলে খামু কি গো। মানুষ তো আমাগোরে বাড়ি যাইবার দিবার চায় না। বাজারেও মজমা বসান যায় না। এহন আমরা কী করমু?’

বেদেনি শিউলী বানুর কাছে দুটি সাপ ছিল। একটি তিনি ‘কালনাগিনী’ ও আরেককটিকে ‘দুধরাজ’। খাবারের অভাবে ‘দুধরাজ’ মারা গেছেন গত সপ্তাহে বলে জানান। শিউলী বলেন, হামারও রুজি বন্ধ, স্বামীর রুজিও বন্ধ। হামাদের ত আর ব্যাংকভরা ট্যাহা নাই। তাইলে হামারা ক্যামনাই খাইমু, ক্যামনাই চলমু।

বেদেপল্লীর বাবু সরকার বলেন, ‘আমি হাটে-বাজারে বান্দও আর বেজীর খেলা দেখিয়ে যা আয়-রোজগার করি, তাই দিয়ে সংসার চালাই। এহন তো কোনো মজমা বসাবার পারি না। এহন খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি। কেউ তো আমাগো সাহায্যও দেয় না। এহন আমরা কী কইরা চলি।

আরেক বেদে সোহেল রানা বলেন, বাইরে যেতে পারিনা। কামাই নায়। মাইয়াডার ঠান্ডা লাগছে। পকেটে ট্যাকা পয়সা নাই। কি আর কমু ভাই, আমাগো দুঃখ দেহে কেডা। কত যে কষ্ট করতাছি।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী আলমগীর আল আমিন হারুন বলেন, আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের অংশ হচ্ছে বেদে পরিবারগুলো। নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এসব বেদে পরিবারে ঐতিহ্য। বেদেদের গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ম্যাজিকসহ বানর নাচ ও সাপ খেলা দেখতে সবাই পছন্দ করে। তাই করোনার এ দূর্দিনে তাদের পাশ্বে দাঁড়ানো আমাদের সবার মানবিক দায়িত্ব।

শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, ‘আমরা এসব বেদে পরিবারগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছি। কিন্তু তাদের জন্য কোনো বরাদ্ধ না থাকায় আর্থিক সহায়তা করতে পারছি না। তবে ইউএনও ও জেলা প্রশাসক স্যার আশ্বাস দিয়েছেন তাদের জন্য সাহায্যের একটা ব্যবস্থা করবেন।

শেরপুর সদর উপজেলার ইউএনও ফিরোজ আল মামুন জানান, সেখানে অবস্থানরত বেদে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: