টাঙ্গাইলে ৩১৮ টি কেন্দ্রে গণটিকা কার্যক্রম
মো.আবু জুবায়ের উজ্জল, (টাঙ্গাইল) :
টাঙ্গাইলের ৯৮ টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় ৩১৮ টি কেন্দ্রে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রেজিষ্ট্রেশনের পাশাপাশি গণটিকা চালু হওয়ায় জেলার সাধারণ মানুষও টিকা গ্রহণ করতে পারছেন। এতে জনসাধারণের মাঝে স্বস্তি দেখা গেছে। তবে টিকা গ্রহণে জনপ্রতিনিধিদের স্বজন প্রীতির অভিযোগ রয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১১ টি পৌরসভার মধ্যে ৩ টি পৌরসভায় ২৪ টি কেন্দ্রে ও ১১৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯৮ টি ইউনিয়নে গণ টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নের তিনটি করে কেন্দ্রে ৬০০ করে টিকা দেয়া হবে। বাকি ইউনিয়ন গুলোতে শিশুদের রুটিন টিকা দেয়ার কার্যক্রম থাকায় পরবর্তীতে সেখানে কোভিড টিকা দেয়া হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল ৯ টার আগে থেকেই সাধারণ মানুষ টিক গ্রহণের জন্য ভীড় করে। টিকা গ্রহণকারীরা মুখে মাক্স ব্যবহার করলেও সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহণের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র জমা দিচ্ছে। এতে করোনায় আক্রান্ত শঙ্কা বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আগ্রহী বয়স্ক নারী-পুরুষের উপস্থিতি রয়েছে। তবে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। হাতের কাছে টিকা পাওয়ায় অনেক খুশি গ্রামের সাধারণ মানুষ। তারা এই টিকা কার্যক্রম আগামীতেও চালু রাখার দাবি জানান।
এ দিকে টিকার কার্যক্রম যাতে কোন ধরনের ব্যাক্ত না ষটে সেই লক্ষে টাঙ্গাইলে টিকা কেন্দ্রগুলো জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি,জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় পরিদর্শন করেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভার আকুরটাকুর পাড়া এলাকার ফিরোজা বেগম বলেন, দেড় ঘন্টা যাবত লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। বৃষ্টিতেও ভিজতে হয়েছে। তারপরও আজকে টিকা গ্রহণ করতে পারবো কিনা তাই নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। আমাদের কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়েছে।
টিকা নিতে আসা অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্য খন্দকার ছানোয়ার হোসেন বলেন, বাড়ি পাশে করোনাভাইরাসের টিকা পাবো এটা কখনও কল্পনাও করি নাই। বাড়ি পাশ থেকে কোভিড টিকা নিতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমাদের সময় ও যাতায়াত খরচ উভয়ই সাশ্রয় হয়েছে।
কাশিল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ড়ের ইউপি সদস্য মহসিনুজ্জামানের বিরুদ্ধে টিকার স্লিপ স্বজনপ্রীতি করেছে বলে অভিযোগের কথা বলা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিনুজ্জামান বলেন, আমি করোনার টিকার দুইশ স্লিপ পেয়েছিলাম। সেগুলো গত রাতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে এসেছি। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধি ও বয়স্কদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে সহযোগিতা করছি। আমি কোন স্বজনপ্রীতি করিনি। ওয়ার্ডের সকল লোকই আমার। চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মেনেই কাজ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন জানান, ১২ টি উপজেলার ১১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯৮টি ইউনিয়নের ২৯৪ টি কেন্দ্রে ৫৮ হাজার ৮০০ টিকা দেয়া হচ্ছে। বাকি ১৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শিশুদের রুটিন টিকা দেয়ার কার্যক্রম থাকায় পরবর্তীতে সেখানে কোভিড এর টিকা দেয়া হবে। ১১ টি পৌরসভার মধ্যে টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮ টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬০০ টিকা, মধুপুর ও গোপালপুর পৌরসভা এলাকায় ৬টি কেন্দ্রে কোভিড টিকা দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকলকে টিকা দেওয়া হবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি, টিকা সংখ্যা কম হওয়ায় কেন্দ্রে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধি ও ৪০ এর অধিক বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জেলা কমিটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। টিকা বিষয়ে কোন অনিয়ম হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।