শিরোনাম

South east bank ad

ঝুঁকিতে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগুম্বুজ মসজিদ, পানিবন্দি শতশত পরিবার

 প্রকাশ: ০২ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট :

বাগেরহাটে প্রবাহমান ‘কুড়ির খাল’ দখল করে মাছের ঘের করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে গত কয়েকদিনের বর্ষনে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগুম্বুজ মসজিদ সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর বলছে এভাবে জলবদ্ধতা সৃস্টি হলে হুমকীতে পড়বে ষাটগুম্বুজ মসজিদ। আর ভুক্তভোগী এলাকাবাসির অভিযোগ, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাচ্ছে না। তবে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলছে স্থানীয় প্রশাসন।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রবাহমান ‘কুড়ির খাল’ দখল করে মাছের ঘের করেছে। ফলে গত কয়েকদিনের বর্ষনে হজরত খানজাহান আলী নির্মিত বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ড হ্যারিটেজ) ষাটগুম্বুজ মসজিদসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ষাটগুম্বুজ মসজিদের মুসল্লি শেখ আব্দুল হালিম জানান, যুগযুগ ধরে ‘কুড়ির খাল’ দিয়ে এই অঞ্চলের পানি নদীতে চলেগেছে। একটি প্রভাবশালী মহল সেই খালে অবৈধ ভাবে ৫/৭টি বাধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে। বৃষ্টি হলেই মসজিদের তিন পাশে পানি জমে। এতে মসজিদের দেয়ালে শেওলা পড়ে তা নস্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত দখলদার হাত থেকে খাল মুক্ত করার দাবী জানান।

ষাটগুম্বুজ মসজিদের ইমাম মাও: হেলাল উদ্দীন মতব্বর বলেন, মসজিদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই ভাল। কিন্তু যে খাল দিয়ে পারি সরে যাবে সেই ‘কুড়ির খাল’ দিয়ে এখন আর পানি সরতে পারে না। খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় সামান্ন বৃষ্টি হলেই ষাটগুম্বুজ মসজিদের তিন পাশে এবং পার্শ্ববর্তি ফুল বাগানে ব্যপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে মসজিদের দেয়ালের নিচের দিকে ড্যাম উঠে শেওলা পড়েছে। মসজিদের মেঝে শ্যাতশেতে হয়ে ব্যবহার অনুযোযোগী হতে চলেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ষাটগুম্বুজ যাদুঘরের কাস্টডিয়ান মোঃ যায়েদ বলেন, বৃস্টি হলেই ষাটগুম্বুজ মসজিদের তিনপাশে অনেক পানি জমে। যেটার কারনে মসজিদের দেয়ালের নিচের দিকে ফাঙ্গাসের সৃষ্টি হয়েছে। এসে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগুম্বুজ মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সুন্দরঘোনা গ্রামের বৃদ্ধ শেখ ওয়াজেদ আলী জানান, দীর্ঘদিন ‘কুড়ির খাল’ দিয়ে এই অঞ্চলের পানি সরে যেত। সেই খালটি কয়েক জনে দখল করেছে। ফলে এখন সবার বাড়ি ঘরে পানি উঠে বসবাস করতে কস্ট হচ্ছে।

মোঃ কায়জার খান জানান, খাল দখল করার ফলে বৃষ্টি হলেই এলাকা তলিয়ে যায়। গত কয়েকদিনের বর্ষনে এলাকায় ব্যপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে শতশত পরিবার। তাদের রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। তলিয়ে যায় পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কোন ফল হচ্ছে না।

গৃহিনী আলেয়া বেগম বলেন, ‘খাল দখল করায় সামান্ন সৃস্টি হলেই ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। সামান্ন এক কাঠা জমির উপর আমার বাড়ি। সেখান দিয়ে শ্রোত বয়ে গেছে। আমরা খুবই বিপদে আছি।’

কৃষক সাইদুল মলঙ্গী বলেন, এই খালটি কয়েকজন প্রভাবশলী দখল করে মাছের ঘের করার পর এখন আর পানি সরে না। প্রায় ৫০ ফুট খাল দখল করে এক ফুট ছোট একটা নালা কেটে দিয়েছে। তাও আবার বাধ দিয়ে দিয়ে পানি যাতে না সরতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছে। শেখ আবুল হোসেন বলেন, এসএ ম্যাপে (মানচিত্র) সরকারী এই খাল টি দেখা যায়। কিন্ত বর্তমান জরিপে সরকারী সেই খালটির অস্তিত্ব নেই। কয়েকজন প্রভাবশালী টাকা দিয়ে সরকারী জমি নিজেদের নামে করার চেস্টা করছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষন হলে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কিছু কিছু স্থানে অবৈধ ভাবে সরকারী খাল দখল প্রভাবশালীরা দখল করেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। অচিরেই সব খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: