ময়মনসিংহে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস স্বাস্থ্যসেবা সচিবের
এইচ এম জোবায়ের হোসাইন
ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহে অচিরেই বিশ্বমানের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ লোকমান হোসেন মিয়া। তিনি বলেন আগামী এক বছর পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবার দৃশ্যমান উন্নয়ন ও আমূল পরিবর্তন আসবে।
খুব দ্রুত চিকিৎসক এবং ৮ হাজার ৫০০ নার্স নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, বৈশ্বিক অতিমারী করোনা মোকাবেলায় দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রতিআস্থা রেখে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাব ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, চলতি বছরের ৪ এপ্রিল দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি একটি রাতও ভালো করে ঘুমাতে পারিনি। দেশের মানুষের এই সংকটময়কালে নিজের দায়িত্ব পালনকে আমি মানবসেবা হিসেবেই বেছে নিয়েছি। আগামী দিনে করোনা চিকিৎসা ও টিকা প্রদান সংক্রান্ত কর্মকান্ড সুচারুভাবে সম্পাদন করে ময়মনসিংহকে একটি মডেল হওয়ার জন্য এবং দেশে প্রথম পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য ভালোভাবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব।
ময়মনসিংহ চেম্বার অবকমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রী আয়োজিত ৩১ জুলাই শনিবার রাতে করোনা মহামারী মোকাবেলা ও ময়মনসিংহের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বিষয়ক ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ লোকমান হোসেন মিয়া এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য সচিব বলেন, করোনা মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সংযুক্ত করে বাংলাদেশে এটিই প্রথম বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা সভা, যা সত্যি প্রশংসার দাবীদার।
বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে বৃহৎ আকারের এই ভার্চ্যুয়াল সভায় সভাপতিত্বে
করেন ময়মনসিংহ চেম্বার অবকমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রীর সভাপতি এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ আমিনুল হক শামীম। রাত ৮টা থেকে গভীর রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘন্টাব্যাপী এই অলোচনা চলে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র প্রত্যেক বক্তার বক্তব্য মনযোগ সহকারে শোনেন এবং নোট করেন। সকল বক্তব্য দাবী-দাওয়াগুলো রেজুল্যাশন আকারে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্যকে নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য সচিব। যাতে পর্যায়ক্রমে জনস্বার্থে সকল দাবী-দাওয়া পূরণ করা যায়।
আমিনুল হক শামীমের দাবীর প্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মমেকহা) কেন্দ্রীয় দশ হাজার লিটারের লিকুইড অক্সিজেন ট্যাকংটিকে উন্নীত করে ২০ হাজার লিটার সমৃদ্ধ ট্যাংক বসানো, মমেকহা’র জন্য ৩টি এ্যাম্বুলেন্স প্রদান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স, লোক বলসহ আইসিইউ বেড বৃদ্ধি করা হবে। সেই সাথে নগরীর এসকে হাপাতালকে আধুনিকায়নের কি কি করা দরকার তার জন্য তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ময়মনসিংহে ভ্যাকসিনের সরবরাহ বৃদ্ধি, করোনাপরীক্ষার বুথ বৃদ্ধি, ক্যানসার ইউনিট দ্রুত চালু করণ ও নির্মানধীন তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দ্রুত চালু করা এবং গৌরীপুরে শূন্যপদে ডাক্তার দেয়ার আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব।
এছাড়াও আমিনুল হক শামীম দীর্ঘ মেয়াদি দাবি সমূহগুলো ও বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান, তাহলো- ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহে আরো ২ হাজার বেডের জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ, ময়মনসিংহ বিভাগে একটি লিকুইড মেডিকেল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও রিফিল স্টেশন স্থাপন করা, শিশু হাসপাতাল নির্মাণ, বক্ষব্যাধি ও ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণ, এস.কে হাসপাতাল আধুনিকায়ণ ও ফিজিওথেরাপি বিভাগকে আধুনিকায়ণ।
ময়মনসিংহ চেম্বার অবকমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রীর সিনিয়র সভাপতি শংকর সাহা’র সঞ্চালনায় করোনাসহ ময়মনসিংহের চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে আলোচনায় অংশ নেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ^াস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার, মোঃ খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীর জাদি সেব্রিনা ফ্লোরা, ময়মনসংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্ট্রার মোঃ হারুন অর রশীদ, ময়মনিসংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হক, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোঃ শাহ আলম, পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ চিত্তরঞ্জন দেবনাথ, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ পরীক্ষিৎ পাড়ে, জেলা আওয়ামীলীগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ জহিরুল হক খোকা ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম, জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট বিকাশ রায়, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলা মচুন্নু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান আলহুসাইন তাজ, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স এসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ) ময়মনসিংহ জেলা শাখা এবং বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক ও নার্স এসোসিয়েশন ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ লায়ন ডা: হরি শংকর দাশ ও সাধার ণসম্পাদক ডা: এইচ এ গোলন্দাজ তারা (জেলা বিএমএ সেক্রেটারি), আসপাডা’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাবুল হোসেন, সাংবাদিক নিয়ামুল কবীর সজল, সাংবাদিক রইছ উদ্দিন (গৌরীপুর) প্রমূখ। সভায়যুক্ত ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তাগন, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাক্তিবর্গ, বিভিন্ন কলজের অধ্যক্ষগন, চিকিৎসক বৃন্দ সাংবাদিক বৃন্দ, জেলা চেম্বার ও মটর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
ময়মনসিংহ নগরীতে একটি শক্তিশালী আরবান হেলথ সিস্টেম চালুকরার প্রতিশ্রুতি এবং আগামী ৭ আগষ্ট থেকে সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে করোনার টিকা গ্রহনের ৩টি করে বুথ স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের (মসিক) মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু বলেন, ময়মনসিংহে ২ হাজার শয্যারএকটি জেনারেল হাসপাতাল, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মমেকহা’তে ৫০ শয্যা আইসিইউই উনিট স্থাপন, এসকে হাসপাতালকে আধুনিকায়ন এবং বিভাগের জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণায় আইসিইউ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবের দৃষ্টি আকর্র্ষণ করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের ডাক্তার, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সরবরাহ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবের প্রতি অনুরোধ জানান।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৩০ বেড থেকে ৪১০টি বেডে উন্নীত করা, আইসিইউ বেড ৫০ এ উন্নীত করা, ১৫টি এনেসথেসিয়া ডাক্তার, ৫০ ডাক্তার ও ১৫০ নার্স প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হক।