ময়মনসিংহ বিভাগে করোনায় আক্রান্ত ২০ হাজারের অধিক, মৃত্যু ২৮৪
এইচ এম জোবায়ের হোসাইন (ময়মনসিংহ):
করোনাভাইরাসের হটসপট এখনও ময়মনসিংহ বিভাগ। কিছুদিন কম থাকলেও ইদানিং আবারো আক্রান্ত, মৃত্যু, ঝুঁকি, আতংক এই বিভাগে সবই বাড়ছে। বিভাগের জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোণা জেলায় গতকাল পর্যন্ত সর্বমোট ২০ হাজার ২৩৮জন লোক আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেছে ২৮৪জন। এপর্যন্ত করোনা ১লাখ ৬১ হাজার ১২৪টি নমুনা টেস্ট করা হয়েছে। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৪ হাজার ২৮৯জন। সরকার বাইরে সকলকে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করলেও অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পড়ছে না।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ মোঃ শাহ আলম জানান, গত চব্বিশ ঘন্টায় বিভাগের চার জেলায় মোট ৭২৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তন্মধ্যে আক্রান্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ১৬৯জন। তন্মধ্যে ময়মনসিংহে ১০৮, নেত্রকোণায় ৮, জামালুরে ৩৭ ও শেরপুরে ১৫জন। বিভাগে অক্রান্তর হা ২৩.৩৭ শতাংশ।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮জন করোনায় এবং ৯জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
শনিবার (১৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ইউনিটটিতে করোনায় মারা গেছেন ময়মনসিংহ সদরের নাসিরুদ্দিন (৬৫), তারা বালা সাহা (৮০), অপর্না গোমেজ (৪২), নার্গিস আক্তার (৬০), তারাকান্দার শাহিদা আক্তার (৩৮), জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার রোকেয়া (৬০), শেরপুর সদরের গেন্দাফুল (৩৫) ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আকলিমা খাতুন (৪৯)।
এ ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান- ময়মনসিংহ সদরের আবদুর রশিদ (৬৫), জেসমিন রহমান (৬৩), মুক্তাগাছার মোছা. মরিয়ম (৭০), সোহরাব উদ্দিন (৬৫), ফুলবাড়িয়ার পারভিন আক্তার (৩৫), আছিয়া বেগম (৪০), তারাকান্দার সুরুজ আলী (৪৮), সুনামগঞ্জের দিজেন্দ্র ( ৬৫) এবং গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শিল্পী আক্তার (৪০)।
ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, করোনা ইউনিটে বর্তমানে ৪৩৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ২২ জন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫৮ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩ জন।
এদিকে ময়মনসিংহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ মোঃ শাহ আলম আরো জানান, করোনায় আক্রান্ত জেলাওয়ারী ময়মনসিংহে ১১,২৯৭জন, নেত্রকোনায় ২,৫৯৫, জামালপুরে ৩,৭৬৬ জন, জন এবং শেরপুরে ২৫৮০ জন। এনিয়ে বিভাগে সর্বমোট মারা গেছেন ২৮৪ জন। এরমধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১১৩ জন, নেত্রকোনা জেলায় ৫২ জন, জামালপুরে ৭৪ জন এবং শেরপুর জেলায় ৪৫ জন।
অকারণ ঘোরাঘুরি, শপিংসহ সবকিছু খুলে দেয়ার প্রেক্ষিতে অবাধ চলাচলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ জানান। গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য চলছে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা বাইরে ঘুরাঘুরি করার প্রেক্ষিতে করোনা সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। দ্রুত আক্রান্তের লাগাম ধরে টানতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগণকে বাধ্য করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান।
মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু জানান, করোনা সংকট মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ থেকে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩২৭ টন চাল ও ৬৫ লক্ষ টাকার খাদ্য সহায়তা। করোনায় তার ( মেয়র টিটুর) ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ৭০ হাজার প্যাকেট খাবার বিতরণ করেছেন। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জনবহুল ৫২৫টি স্থানে করা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও ১০০ টি মাইকে দৈনিক সচেতনতা বার্তা প্রচার, ২০টি স্থানে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা এবং বিতরণ করা হয়েছে কয়েক লক্ষ মাস্ক। ৪টি গাড়ি এবং ২৫টি স্প্রে ম্যাশিনের মাধ্যমে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে নিয়মিত।
তিনি আরো জানান, কাঁচাবাজারকে সুপ্রশস্ত স্থানে- প্রথমে কাঁচারিঘাটে ও পরবর্তীতে রেলস্টেশনের সামনে স্থানান্তর করা হয়েছে। মাস্ক, সামাজিক দুরত্ব এবং করোনা প্রতিরোধে সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে মসিকের ভ্রাম্যমান আদালত।
মেয়র টিটু জানান, স্থাপন করা হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। ডাক্তারদের যাতায়াত এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের নমুনা সংগ্রহে করা হয়েছে পরিবহনের ব্যবস্থা। মানুষ যেন ঘরে থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে সেজন্য চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সেন্টার। এছাড়াও করোনা সচেতনতা বাড়াতে নগরীর একাধিক পয়েন্টে নিয়মিত বিরতিতে করা হচ্ছে মাস্ক ক্যাম্পেইন।
করোনা ভ্যাকসিন প্রদান ব্যবস্থাপনায়ও সিটি করপোরেশন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। শুরু থেকেই ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনা ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন এবং টিকা গ্রহণের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান জানান, গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে সকললে এগিয়ে আসতে হবে। একটি নিরাপদ ময়মনসিংহ গড়ে তুলতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় পরিষদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় করোনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক, বি.এম.এ ময়মনসিংহ জেলা শাখা ও বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এইচ. এ. গোলন্দাজ জানান, সরকার মাস্ক বাধ্যতামূলক করলেও এখনো মাস্ক পড়ছে না। গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য চলছে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা বাইরে ঘুরাঘুরি করার প্রেক্ষিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। দ্রæত আক্রান্তের লাগাম ধরে টানতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগণকে বাধ্য করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।