শিরোনাম

South east bank ad

করোনায় ক্ষতিরমুখে গাজীপুরের নার্সারী মালিকরা

 প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মেহেদী হাসান সোহেল (গাজীপুর):

করোনার কঠোর বিধিনিষেধে দুই বছর ধরে জাতীয়ভাবে বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষরোপণ অভিযান বন্ধ। সড়কে চলছেনা ব্যক্তিগত যান, আসছেনা ক্রেতা, বিক্রি কমে ক্ষতিগ্রস্ত গাজীপুরের নার্সারী মালিকরা। ক্রেতা নেই, তবুও অযতেœ তো ফেলে রাখা যায় না নার্সারি। তারপরও চলছে পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা।

নার্সারী মালিকেরা জানালেন, সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বৃক্ষমেলা হয়ে থাকে। অনেক মানুষ কেবল বেড়ানোর জন্যও মেলায় আসেন। ফলভরা গাছের শোভা, ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁরা কিনে নেন। এভাবেই মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। করোনার সংক্রমণের জন্য এবার মেলা না হওয়ায় সেই আগ্রহে ছেদ পড়েছে। নার্সারি মালিকরা জানান, বছরে চারা বিক্রি হয় জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বর্ষায় ‘ফলের মৌসুম’। এ মৌসুমেই বিক্রি বেশি হয় চারাগাছ। মেলায় গাছে ফল ধরা দেখে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নার্সারী এসোসিয়েশন সুত্র জানায়, ২০১৯ সালে জেলায় চারাগাছ বিক্রি হয়েছিল তিন লাখ। পরপর দুই বছর মেলা না হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা নার্সারী মালিকরা আর্থিক ক্ষতিরমুখে।

ঢাকা- কাপাসিয়া সড়কের রাজাবাড়ি থেকে টোক পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে গড়ে ওঠেছে ত্রিশটির বেশী নার্সারী। শুক্রবার সকালে কথা হয় ভুবনেরচালা এলাকার ভাই ভাই নার্সারীর মালিক শরিফুল ইসলামের সাথে। চারপাশ অনেক ছোটবড় ফুলে ফলে সাজানো গাছের সমাবেশে নার্সারী। একটি অটোরিক্সায় কয়েকটি চারাগাছ উঠাচ্ছিলেন দুইজন কর্মচারী। ক্রেতা উপজেলার রাউৎকোনা গ্রামের যুবক চাঁন মিয়া। এ প্রতিবেদকের পরিচয় জানতেই কাছে এগিয়ে আসেন তাঁরা। কেমন আছেন জানতে চাইলে নার্সারী মালিক শরিফুল ইসলামের উত্তর পাঁচ দিন পর আজকে কয়েকটি চারা বিক্রি করলাম। করোনার দেড় বছরে নার্সারী মালিকরা ভাল নেই। পরপর দুই বছর বৃক্ষমেলা হয়না। শহরের সৌখিন মানুষরা মেলা থেকে ছাদবাগানের জন্য টবে রাখা গাছ কিনে নিতেন। বৃক্ষমেলায় দেখে গাড়ী নিয়ে নার্সারীতে চলে আসতেন। সড়কে চলার পথে গাড়ী থামিয়েও চারা নিতেন। তিনি আরও বলেন, বিক্রি কমলেও জমি ভাড়া, কর্মচারী খরচ কমে নাই বরং মাটি সংগ্রহ করতে অনেক বেশী টাকা লাগে।

জামিরারচর এলাকার সুফলা হর্টি কালচার নার্সারীতে গিয়ে দেখা যায় মালিক আরিফ হোসেন পরিচর্যায় ব্যস্ত। বেচাকেনার কথা জিজ্ঞাসা করলে বললেন, লকডাউনের কারণে ঢাকার শৌখিন লোকজন বাড়ি বা ফ্ল্যাটে দামী গাছের চারা বেশী নেন। করোনার আশঙ্কায় তাঁরা বাইরেই বের হন না। বিক্রিও অনেক কমে গেছে। তিনি জানান, হাজারেরও বেশী জাতের চারা গাছ রয়েছে এই নার্সারীতে। করোনার আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারেরও বেশী টাকা বিক্রি হতো, এখন একেবারেই বিক্রি কমে গেছে।

শুক্রবার বিকেলে উপজেলার আমরাইদ এগ্রো এন্ড নার্সারীতে গিয়ে কথা হয় মালিক আসাদুজ্জামান আতিক এর সঙ্গে। নার্সারিতে দেখা গেল ড্রামে লাগানো বিভিন্ন গাছের সারি। অনেক গাছের সরু শাখাগুলো নুয়ে আছে ফলে। এই নার্সারীতে রয়েছে আম, আমলকী, বাতাবিলেবু, জামরুল, লটকন সব গাছেই ফলের সমাহার। তিনি বলেন, এখন ফলেরই মৌসুম চলছে। বরাবর এসব ফল-ফুলের গাছের বিপুল মনোরম সমারোহ ঘটে বৃক্ষমেলায়। করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে এবার এখনো বৃক্ষমেলা শুরু হয়নি। বিক্রি কমে গেলেও খরচ কমে নাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে নার্সারী এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় নেতা রমজান আলী জানান, ২০১৯ সালে গাজীপুর জেলায় চারাগাছ বিক্রি হয়েছিল তিন লাখের বেশী। বৃক্ষমেলা না হওয়াটা তাঁদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। গাজীপুর জেলায় বিগত ২০১৯ সালে মেলায় এবং নার্সারীতে ১ কোটি টাকার চারা ও গাছ বিক্রি হয়েছিল। অনেক নার্সারী মালিক দুর্লভ গাছ ও চারা আমদানি করে বেশ বিপদে আছেন। অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আপাতত খরচ চালাচ্ছেন। মালিকরা ঋণ ও দেনায় জর্জরিত।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে সকলকে সাবধান হতে হবে। এ অবস্থায় নার্সারী মালিকদের টিকে থাকতে হবে। এজন্য নার্সারীমালিকদের প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: