শিরোনাম

South east bank ad

রাজাপুরে গোয়াল, বারান্দা ও পরিত্যক্ত রান্না ঘরেই স্ত্রী-সন্তান নিয়েই জীবন পার করছে বৃদ্ধ আফজাল

 প্রকাশ: ১০ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):

গরীবের ঘরে জন্ম নেয়া আফজাল হোসেন পাননি কোন পৈত্রিক সম্পত্তি। পিতার সাথে যে ঘরে বসবাস করে শিশুকাল পার করেছে তা ছিলো মাতৃকুল থেকে পাওয়া জমি। পিতা-মাতা মারা যাবার পরে ওই জমি এক মামা তার নামে রেকর্ড করে নেয়। কৈশোর বয়সেই সম্পত্তিহীন হয়ে বিভিন্ন জায়গায় থেকে জীবন পার করছেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পরে আরেক গরীবের কন্যাকে নিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। স্থানীয় এবং প্রতিবেশীদের দয়ায় অব্যবহৃত স্থানে শুরু হয় সংসারিক জীবন। এরপর একে একে ৩পুত্র ও ৩কন্যা সন্তানের জনক হন আফজাল হোসেন। এখন তার বয়স ৬০ বছরের কোঠায়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও একটু মাথা গোঁজার ঠাই নেই আফজাল হোসেনের। কখনো পরিত্যক্ত গোয়ালঘর, কখনো খালি বারান্দা আবার কখনো অব্যবহৃত রান্না ঘরে আশ্রয় নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে তাকে। তার জন্মস্থান রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের সাকরাইল গ্রামে।
আফজাল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে তার করুণ জীবন কাহিনী। তিনি জানান, সাকরাইল গ্রামের নুরুল ইসলামের ঘরে ষাট বছর পূর্বে জন্ম হয় ১বোন ও ৩ভাইয়ের। কিশোর বয়সেই বাবা মারা যান। মায়ের বাবার বাড়ি থেকে একখন্ড জমিতে কোনমতে ঘর করে আমাদের নিয়ে বসবাস করতো। প্রথমে বাবা মারা গেলে মায়ের সাথেই আমরা থাকতাম। অতিকষ্টে জীবনযাপন চলতে থাকে। ইতিমধ্যে মা রোকেয়া বেগমও মারা যান। এরপরে জ্ঞাতি এক মামা তার নামে জমিটুকু রেকর্ড করে নেন। ভূমিহীন হয়ে পড়েন তারা। এসব কারণে লেখাপড়া করতে না পারায় অক্ষরজ্ঞানহীনই রয়েছেন। বোন ও অন্যরা মাথা গোঁজার ঠাই না থাকায় এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে কাজ নেন। জন্মস্মৃতি ধরে রাখতে জন্মস্থান ত্যাগ করেননি আফজাল। কয়েকবছর পরে প্রাপÍ বয়স্ক হলে বিয়ে করার উদ্যোগ নেন। ভূমি ও সম্বলহীন আফজাল বিয়েও করেন এক দরিদ্র পরিবারের কন্যা রুমাকে। প্রতিবেশীর দয়ায় তাদের পরিত্যক্ত বারান্দায় শুরু হয় দাম্পত্য জীবন। পরিত্যক্ত গোয়ালঘর, কখনো খালি বারান্দা আবার কখনো অব্যবহৃত রান্না ঘরে বসবাস করেই জীবনের সময়টুকু অতিবাহিত করছেন। ইতিমধ্যে তাদের সংসারিক জীবনে ৩পুত্র ও ৩কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। শ্রমজীবী আফজাল দিনমজুরী করে যতটুকু উপার্জন করতো তা ৮জনের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগানোই কষ্ট সাদ্য বিষয় ছিলো। তারমধ্য থেকেও সন্তানদের অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন করেছেন। ৩সন্তানের বড় দু’জন ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের কাজ করছেন। ১৪বছর বয়সী ছোট ছেলে বাবার সাথেই শ্রমজীবীর কাজ করছে। বড় কন্যাকে পাত্রস্থ করতে পারলেও বাকি দু’কন্যা ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের চাকুরী করছেন। লেখাপড়া না জানায় কোথাও কাউকে চিনেন না তিনি। একারণে কারো কাছে আবেদনও করতে পারেনি। অসহায় আফজাল প্রধানমন্ত্রীর উপহার আবাসনে একটু মাথা গোজার ঠাই পেতে আকুল অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনির হোসেন সিকদার জানান, আফজাল হোসেনের একখন্ড জমিও নেই যেখানে তিনি মাথা গোজার ঠাই করে নিবেন। শ্রমজীবীর কাজ করে যা উপার্জন করে তা দিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকাই দুঃসাধ্য। আমরা জনপ্রতিনিধিরা পারি তাকে সরকারী চাল সহায়তা দেয়ার একটি কার্ড দিতে। তা দিয়ে তো জমি কিনে ঘর করে থাকা সম্ভব না। আমাদের গ্রামে সরকারী পরিত্যক্ত জায়গা আছে। যেখানে একটু মাথার গোজার ঠাই নিতে পারে আফজাল। সরকারের আবাসন ব্যবস্থার মহতি উদ্যোগে ভূমিহীন আফজালকে যদি এমন সুযোগ করে দেয়া হতো তাহলে শেষ বয়সে একটু শান্তিতে বসবাস করতো সে, বলেও জানান ইউপি সদস্য মনির।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: