শিরোনাম

South east bank ad

এলাকাবাসীর সেচ্ছাশ্রমেই হচ্ছে প্রায় দুই’শ ফুট স্টিলের সেতু

 প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এইচ. এম জোবায়ের হোসাইন:

কথায় আছে ‘দশের লাঠি একের বোঝা কিংবা দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ বাংলা এসব প্রবাদ-প্রবচন সমাজ জীবনে প্রচার করে ঐক্যের অমোঘ বাণী। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা যেকোনো কাজকে করে তোলে সহজ ও সুন্দর।

তেমনি এক সুন্দর ঐক্যবদ্ধ সামাজিক কাজে যোগ দিয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাউহা গ্রামবাসী। নেত্রকোনা জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে গ্রামবাসী মিলে সুরিয়া নদের ওপর তৈরি করছেন স্টিলের একটি বিশাল সেতু।

স্থানীয়রা জানান, সুরিয়া নদীর এক পাশে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাউহা ইউনিয়ন আর অপর পাশে নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশুরা ইউনিয়ন। এই সুরিয়া নদী পারাপারের জন্য নেই কোনো সেতু। শুকনো মৌসুমে হেঁটে নদী পার হওয়া গেলেও বর্ষাকালে থাকে পানিতে টইটুম্বুর। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নারী-শিশুসহ হাজারো মানুষকে।

গ্রামবাসী বলছেন, এখানে একটি সেতু নির্মাণ ছিল তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। কিন্তু দিনের পর দিন শুধু বিভিন্ন মহলের আশ্বাসই পেয়ে গেছেন তারা, কাজের কাজ হয়নি কিছুই। তাই কারো আশায় বসে না থেকে এবার নিজেরাই সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

আজহার উদ্দিন নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি খেয়া পারাপারের মাধ্যমে দুই অঞ্চলের মানুষ যাতায়াত করে আসছে। বিভিন্ন সময় গর্ভবতী নারী ও শিশুরা চলাচল করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েছেন। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে।

সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন সময় এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের জন্য সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে আবেদন করেছি। স্থানীয় এমপির কাছেও বার বার বলে ব্যর্থ হয়েছি। পরে জেলা পরিষদ সদস্য খায়রুল বাসারের পরিকল্পনায় গ্রামবাসী বসে আলোচনা করে নিজেরাই ব্রিজটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিই।

তিনি আরও বলেন, এই ব্রিজটি নির্মাণের জন্য গ্রামের প্রত্যেক মানুষের কাছ থেকে ৫০০-১০০০ টাকা করে চাঁদা তুলছি। একইসঙ্গে আশেপাশের বাজারের দোকানদাররাও তাদের ইচ্ছামতো টাকা আমাদের দিচ্ছেন। সেই টাকাগুলো দিয়েই আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।

স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, আমরা কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে এই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে নদের দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়েছে। মাটি কাটা ও ভরাট করছি আমরা নিজেরাই। এটি তৈরিতে কেউ নগদ টাকা, কেউ বাঁশ, জমি দিয়েছেন। আবার অনেকে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এখানে পারাপারে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। অনেক মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে অনেকভাবে কষ্ট করছে। আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল এখানে ব্রিজ হবে। কিন্তু এখনো সেটি সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন আমাদের এলাকার যুব সমাজ নিজেরা উদ্যোগী হয়ে নিজেদের অর্থায়নে কাজটি করছে। ব্রিজটি হলে এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হবে। এতে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে যোগাযোগের সুন্দর একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে।

গ্রামবাসীর উদ্যোগে এ সেতু নির্মাণের মূল পরিকল্পনাকারী ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ সদস্য এইচএম খায়রুল বাসার। তিনি বলেন, এলাকাটি দীর্ঘ দিনের একটি অবহেলিত অঞ্চল। এখানে একটি সেতু না থাকায় কয়েকটি এলাকার মানুষের অনেক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আর এখানে থেকে ময়মনসিংহ সদর প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। তাই কেউ অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে সদরে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর এখান থেকে আধা ঘণ্টা দূরত্বে নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল। তাই এই সেতুটি হলে দুই জেলার যোগাযোগ খুবই সহজ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে একটি সেতুর জন্য বিভিন্ন জায়গায় তদবির করেছি। সরকারের উন্নয়ন একটু সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আমরা চিন্তা করলাম, গ্রামের যুবকসহ সবাইকে নিয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা যায় কি না। সে লক্ষ্যে আমরা নিজ দায়িত্বে সাময়িক একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে দুইটি কাজ হবে। একদিকে এলাকার উন্নয়নও হয়ে যাবে অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য একটি অনুপ্রেরণার জায়গা তৈরি হবে।

প্রায় ২৫০ ফুট প্রস্থ এ নদীর ওপর মূল সেতুটি হবে ১৯০ ফুট। আর বাকি অংশে থাকবে সংযোগ সড়ক। এ কাজটি সম্পন্ন হলে শুধু যে দুই জেলার সংযোগ ঘটবে তাই নয়, সাধারণ মানুষের মান উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন গ্রামবাসী।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: