মাদক প্রতিরোধে আসছে ‘সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
মাদক প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনসহ এবার ‘সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ নামে নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বস্তরে মাদকের চাহিদা কমানো হবে।
গ্রেপ্তারের পাশাপাশি কাজ করা হবে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা বা পুনর্বাসনেও। এসব কাজে সম্পৃক্ত থাকবেন মসজিদের ইমাম, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে মাদক অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
গতকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ ‘সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়নে কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএনসির ডিজি মো. আবদুস সবুর ম-ল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সব রাষ্ট্রেই মাদক অন্যতম সমস্যা। সারাদেশের হাজতির ৭৫ শতাংশই মাদক মামলার আসামি। যেভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন করা হয়েছে, একইভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে মাদক প্রতিহত করতে হবে। আশা করি, ‘সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’র মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারব। এজন্য মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, এনজিও, সুশীল সমাজসহ সবার সম্পৃক্ততা জরুরি।”
মন্ত্রী বলেন, ‘আইস-এলএসডিসহ আরও ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর মাদক দেশে আসছে। বাংলাদেশে মাদক উৎপাদন না হলেও টেকনাফ-বান্দরবনের দুর্গম সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন মাদক আসছে। এরই মধ্যে দুর্গম এলাকাগুলোতে নজরদারি কড়াকড়ি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সবক্ষেত্রেই ডোপ টেস্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে মাদকের চাহিদা রোধে সমাজ যদি এগিয়ে না আসে, যুবসমাজকে যদি মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝাতে না পারি, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকে যদি মাদকমুক্ত না রাখতে পারি, তাহলে কিছুই সম্ভব হবে না।’
ডিএনসির ডিজি বলেন, ‘সম্প্রতি নতুন নতুন মাদকের মাদকের প্রাদুর্ভাবে যুবসমাজ হুমকির মুখে পড়েছে। এজন্য সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। গত ৬ মাসে ডিএনসির ডাটাবেজে ৭০ হাজার মাদকাসক্ত ও ১০ হাজার চোরাকারবারির তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, গত ৫ বছরে ঢাকা রেঞ্জে মোট মামলা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৯২টি। যার মধ্যে ৭৮ হাজার ৪৮৭টি মাদক মামলা। শতকরা হিসাব করলে যা মোট মামলার ৪৬ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ঢাকা রেঞ্জে প্রতি বছর গড়ে ১৬ হাজার মাদক মামলা হচ্ছে, বিপরীতে গড়ে গ্রেপ্তার হচ্ছে ২০ হাজার আসামি। এ ছাড়া বর্তমানে ২১ হাজার মাদক মামলা চলমান রয়েছে। যার ১৬-১৭ হাজার মামলার আসামি জামিনে রয়েছেন। এসব কিছু মাথায় নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। ফলে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা জরুরি ছিল।
ঢাকার ডিসি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, মাদক নির্র্মূলে প্রত্যেক এলাকায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ মাসে অন্তত দুবার জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে হবে। কিশোরগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথাকথিত সোর্সরাই মাদকের বড় ডিলার হিসেবে কাজ করে থাকে। অথচ মাদক নির্মূলে নারীদের সোর্স হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। কারণ মাদকাসক্তদের হাতে নারীরাই বেশি নির্যাতিত হয়ে থাকেন।