বাংলাদেশ পুলিশ এই জাতির সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি
২০ আগস্ট দিবাগত রাত গুলশান ও উত্তরা এলাকায় আমার নৈশ রণপাহারা তদারকি ছিল। গভীর রাতে তিলোত্তমা ঢাকার এক অনবদ্য রূপ অদ্ভুত নীরবতার মাঝে প্রস্ফুটিত হয়। জনকোলাহল বিবর্জিত, শূন্যতার মাঝে এ এক অন্যরকম ঢাকা। অপরাধীরা সাধারণত এই সময়ে অধিক তৎপর থাকে।তাই সারারাত সবাই যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন সমগ্র ঢাকা মহানগরী জুড়ে নির্ভীক, দৃঢ়প্রত্যয়ী, নিষ্ঠাবান, পেশাদারি টীম ডিএমপি'র গর্বিত সদস্যরা রাতের ঘুমকে পেছনে ফেলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। তাদের এই আত্মত্যাগ কারোর নজরে পড়ে না। রাতের আঁধারের মতোই মিলিয়ে যায় সবার অগোচরে।
উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় রাত্রিকালীন পুলিশি তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে গুলশান বিভাগের বিভিন্ন থানা হতে নিয়োজিত অফিসার ও ফোর্সদের ডিউটি তদারকি করতে করতে ভোর ৫টায় বাড্ডা ইউলুপ এলাকায় নিয়োজিত মোবাইল প্যাট্রল পার্টিকে চেক করছিলাম।কাছে যেতেই পার্টি ইনচার্জ একজন সাব-ইন্সপেক্টর এগিয়ে এলো। তাকে দেখে ভীষণ আত্মপ্রত্যয়ী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনে হলো। প্রথাগত নিয়মে চেকিং শেষে চলে যাওয়ার সময় সে হঠাৎ বলে উঠলো, "স্যার একটু কথা ছিলো"। গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনে ভীষণ অবাক আর অদ্ভুত ভালোলাগায় আপ্লুত হলাম। তার কথার সারমর্ম হচ্ছে, বিগত ১৯ আগস্ট রাতে বাড্ডা থানা এলাকায় যে মার্ডার হয়েছে সেই মার্ডারে জড়িত একজন আসামীর তথ্য তার কাছে এসেছে। সেই মুহূর্তে অভিযান পরিচালনা না করলে সেই আসামী পালিয়ে যাবে। যদিও সে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা না কিন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সহায়তা সর্বোপরি মামলার রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিবারকে ন্যায়বিচার দেয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ অভিযানে যেতে চায়। আমি সানন্দে তাকে অনুমতি দিলাম। সুখের খবর হচ্ছে সেই মার্ডার মামলার আসামীকে সে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
পুলিশের যে কোনো বিষয়ে অনেককেই প্রচন্ডভাবে জাজমেন্টাল হয়ে কখনো কখনো পুরো পুলিশকে নিয়ে ট্রায়াল করে ইচ্ছেমতো সামাজিক মিডিয়ায় রায় দিয়ে দিতে দেখি। তাদের কাছে পুলিশের দিনলিপি কিংবা রাতলিপিতে লেখা এরকম হাজারো আত্মত্যাগ, দায়বদ্ধতা, পেশাদারিত্বের হয়তো কোনো মূল্যই নেই।মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের গর্বিত উত্তরাধিকার আর জাতির যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সম্মুখযোদ্ধার দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ পুলিশ এই জাতির সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি।এবারে করোনাযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় সম্মুখযোদ্ধারা জীবন দিয়ে পুনরায় তা প্রমাণ করেছেন।
(ডিসি গুলশান সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিপিএম এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে)