শিরোনাম

South east bank ad

"বেগম রোকেয়া কখনো নিজেকে বেগম বলতেন না": এসপি বিপ্লব কুমার

 প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারী ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   পুলিশ

"বেগম রোকেয়া কখনো নিজেকে বেগম বলতেন না": এসপি বিপ্লব কুমার

বিপ্লব কুমার সরকার

প্রতিটি মানুষ সমাজে জন্ম নেয় মানুষ হিসেবেই, তারপর সমাজই তাকে গড়ে তোলে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে। কাজেই ছেলে বা মেয়ে হলো সমাজের সৃষ্টি। বিশেষ করে মেয়েদের তো আমরা মানুষ হিসেবে না ভেবে শুধু মেয়ে হিসেবে গড়ে তুলি, মনের অজান্তেই বৈষম্যের দেয়াল বুনি, কখনোবা আমাদের গড়ে ওঠা ভুল মানসিকতায় নির্যাতনের খড়গ হাতে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ি কিংবা তথাকথিত শ্রেষ্ঠত্বের নামে পশুত্বের পরিচয় দেই। এইসব কূপমন্ডুকতা থেকে মেয়েদের রক্ষা করার জন্য সেই উনিশ শতকের শুরুতেই একজন মহামানবী এগিয়ে এসেছিলেন, জ্বালিয়েছিলেন আলোর মশাল, ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষা ও স্বাধিকারের আন্দোলন। অনেকেই তাকে বেগম রোকেয়া বলে। দুঃখের বিষয়, তিনি কিন্তু নিজেকে বেগম রোকেয়া হিসেবে পরিচয় দিতেন না, বরং রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন হিসেবেই পরিচয় দিতেন কিংবা তার ডাক নাম রুকু হিসেবে। বেগম, মহিলা হলো নারীবাচক শব্দ। মহল (অন্দরমহল) থেকে মহিলা শব্দটি এসেছে। এসব শব্দের মাধ্যমে নারীদের শৃঙ্খলিত করা হয়। এটা রোকেয়া জানতেন বলেই তিনি সচেতনভাবে বেগম শব্দটা ব্যবহার করতেন না। অথচ আমরা তাকে বেগম নামে ডাকি। তাছাড়া অনেকেই বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলে। এটাও ভুল। কারণ রোকেয়া কেবল নারীদেরকেই জাগিয়ে তুলেন নি, বরং তিনি পুরুষদেরকেও অনেক গুলো প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন, তাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলেছেন, ততকালীন সমাজ ব্যবস্থার সমাজ ব্যবস্থার অসংগতিগুলো তুলে ধরে তা সংস্কারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যদি সমাজ সংস্কারক হয়, রাজা রামমোহন রায় যদি সমাজ সংস্কারক হয় তবে রোকেয়া হলেন আরও বড় সমাজ সংস্কারক।

পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ১৮টি সভ্যতা চিহ্নিত হয়েছে, তার মাঝে শ্রেষ্ঠ সভ্যতা হলো গ্রীক সভ্যতা। সেই গ্রীক সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন গুটি কতক লোক, তারাই পুরো জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমাদের দেশকে নিয়েও এখন পর্যন্ত স্বপ্ন দেখিয়েছেন মাত্র ২ জন ব্যক্তি।

তাদের একজন হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ২ টি স্বপ্ন দেখেছিলেন-

বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা ও

বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী করে একটি সুখী, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে টিকিয়ে রাখা।

বঙ্গবন্ধু সফলভাবে তার প্রথম স্বপ্নটি পূরণ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্বপ্ন পূরণের পূর্বেই ঘাতকেরা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। তারপর অনেক জল গড়িয়েছে। একসময় এদেশের বুক থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, তার নাম নেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। কিন্তু যে জাতির জন্ম হয়েছে তার হাত ধরে, তাকে কি মুছে ফেলা যায়?

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্নপুরণের জন্য আমাদের দ্বিতীয়বার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই প্রথম এ জাতির জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেন, নাম দিলেন ভিশন-২০২১ যার লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশের পরিণত করা। শুধু তাই নয়, তিনি রূপকল্প বা ভিশন-২০৪১ও ঘোষণা করলেন যার লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা। আর সেই লক্ষ্য যেন টেকসই হয় সেজন্য নিলেন ডেল্টা-২১০০ প্ল্যান ও এসডিজি বাস্তবায়ন। বঙ্গবন্ধুর পরে আর কোন সরকার এই দেশ বা জাতিকে নিয়ে এমন কোন স্বপ্ন দেখান নি কিংবা এমন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেন নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এজন্য আমাদেরও অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। বিশেষ করে তোমরা যারা শিক্ষার্থী তারাই আগামীতে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ গড়ার জন্য নেতৃত্ব দিবে। এজন্য তোমাদের একটি পরামর্শই দিব, সেটা হলো তোমাদের প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। পড়াশোনার বিকল্প একটাই, সেটাও পড়াশোনা। শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়লে হবে না, জানার জন্য পড়তে হবে। এদেশের ইতিহাসকে পড়তে হবে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হবে। সবাইকে বড় বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। শুধু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বা বড় চাকুরীর স্বপ্ন দেখলে হবে না, তোমাদের মাঝে কেউ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি হবে, কেউ নিউটন হবে আবার কেউবা সাকিব আল হাসান হবে। আবার কেউ বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনার মতো নেতা হবে। এজন্য শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। মনে রাখবা, তোমাদের স্বপ্ন শুধু তোমাদের না তোমাদের বাবা-মারও স্বপ্ন। তারা অনেক কষ্ট করে উপার্জন করে তোমাদের জন্য ব্যয় করে, কিন্তু সে কষ্ট কখনো বুঝতে দেয় না। তাই বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমেই সেই কষ্ট স্বার্থক হবে।

তোমাদের আরেকটা কথা বলি। আমি তোমাদের জন্য অনেক দোয়া করি। তোমরা অনেক বড় হও। এই ছাদ ফুড়ে একদিন আকাশ স্পর্শ করো। কিন্তু সব সময় তোমাদের পা মাটিতে রাখবে। কখনো মাটি থেকে পা উঠাবে না। কেন জানো??

যখন মানুষ অহংকারী হয়, তখন তার পা মাটি থেকে সরে যায়। আর অহংকার হলো পতনের মূল। মাটি থেকে পা সরালে মানে তুমি অহংকারী হয়ে গেলে, তোমার শিকড় থেকে উড়ে গেলে, ধ্বংস হয়ে গেলে।

আর একটি কথা দিয়েই শেষ করবো, তোমরা যারা আজকে আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ নিলে, তারা শুধু শারীরিকভাবে শক্তিশালী হলে হবে না, মানসিকভাবেও শক্তিশালী হতে হবে। তোমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ কর‍তে হবে। কিন্তু কখনো আইন নিজের হাতে তুলে নিবে না। সেজন্য আমরা আছি। বিপদে পড়লে পুলিশকে জানাবে, ৯৯৯ এ ফোন দিবে। শুধু নিজের না, অন্যের বিপদ দেখলেও পুলিশকে জানাবে কিংবা ৯৯৯ এ ফোন দিবে। তোমরা তোমাদের এই প্রশিক্ষণ ও আত্মবিশ্বাস সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবে, তবেই রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্ন পূরণ হবে, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ হবে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

(পুলিশ সুপার রংপুর, জনাব বিপ্লব কুমার সরকার, বিপিএম (বার), পিপিএম)

BBS cable ad

পুলিশ এর আরও খবর: