ঘরেও মাস্ক পরার পরামর্শ দিল ভারত

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়ায় ঘরের মধ্যেও নাগরিকদের মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। সেই সঙ্গে এখন বাড়িতে বাইরের কাউকে না ডাকা এবং অযথা বাইরে না বেরনোর পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হবেন না। কারণ মিথ্যা আতঙ্কিত হলে ক্ষতিই হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন রয়েছে তবে পরিবহনে কিছু সমস্যা রয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ভারত সরকারের থিংকট্যাঙ্ক নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ডা. ভি কে পাল বলেছেন, ঘরের মধ্যে একজন কোভিড পজিটিভ ব্যক্তি থাকলে পরিবারের অন্যদের সংক্রমিত হওয়া প্রতিরোধে তাকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
দেশজুড়েই অক্সিজেনের হাহাকার চলছে। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিল পর্যাপ্ত অক্সিজেন রয়েছে। কিন্তু অক্সিজেন প্লান্ট থেকে সেগুলোকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়াটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অক্সিজেন পরিবহণের জন্য ট্যাঙ্কার কেনা বা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেগুলিকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে শারীরিক দূরত্ব মানা না হলে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ দিনে ৪০৬ জন সংক্রমিত হতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তির অন্যদের কাছাকাছি আসা অর্ধেকে নামানো গেলে ওই সময়ে তার থেকে ১৫ জনের মতো সংক্রমিত হতে পারেন। আর তার অন্যদের সংস্পর্শে আসা ৭৫ শতাংশ কমানো গেলে এই সংখ্যা গড়ে আড়াই জনে নেমে আসে।
ভারতে প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড অক্সিজেন সংকটে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। মর্গ ও শ্মশানে ভিড় পড়ে গেছে। শ্মশানে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দিল্লিসহ কয়েক রাজ্যে গণচিতা তৈরি করা হয়েছে। তাতেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। খোঁড়া হচ্ছে গণকবর এবং মরদেহ পোড়াতে বানানো হয়েছে অস্থায়ী শ্মশান। জাত-ধর্ম ভুলে মৃতদেহ সৎকারে সহযোগিতা করছে মুসলিমরাও।
কয়েকটি রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা জানিয়েছেন, এর আগে এমন অবস্থা কখনো দেখেননি তারা। ভারতে এখন যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তার গতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি। ভারতে এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে যুক্তরাষ্ট্রও পেছনে পড়ে যাবে। করোনার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ভারতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে মাসে ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর রূপ নেবে। এসময়ে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সংক্রমণও হবে রেকর্ড পরিমাণ।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭৬৪ জনের।
ভারতে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৫ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮০ জন।