শিরোনাম

South east bank ad

কৃষিজমি ভরাট করে গড়া আবাসনে নকশা অনুমোদন করবে না রাজউক

 প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   হাউজিং

কৃষিজমি ভরাট করে গড়া আবাসনে নকশা অনুমোদন করবে না রাজউক

রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ ২০২২-২০৩৫) আওতাভুক্ত এলাকার কৃষিজমিতে আবাসন নির্মাণে বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে ড্যাপে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. নুরুল আমিনের স্বাক্ষরে প্রজ্ঞাপনটি গত রোববার প্রশাসন শাখা-২ থেকে জারি করা হয়। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করা হলো ঢাকা নিয়ে বিশদ এ পরিকল্পনাটি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কৃষিজমিতে সাধারণভাবে সব ধরনের অবকাঠামো ও আবাসন নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে শর্তসাপেক্ষে রাজউকের অনুমোদন নিয়ে কৃষিসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম—যেমন পোলট্রি ও গবাদিপশুর খামার, ফিশারি ইত্যাদির জন্য অস্থায়ী অবকাঠামো এবং ইউটিলিটি সরবরাহ লাইন নির্মাণ করা যাবে।

বন্যাপ্রবাহ এলাকায় আরো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সেখানে ভায়াডাক্ট সড়ক ছাড়া কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের প্রায় ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০২২-২০৩৫ মেয়াদের জন্য প্রণীত ড্যাপ ২০২২ সালের আগস্টে কার্যকর হয়। এর তিন মাস পর, ওই বছরের নভেম্বরে প্রথমবার ড্যাপে সংশোধন আনা হয়। সর্বশেষ এ সংশোধনটি দ্বিতীয়বারের মতো ড্যাপে পরিবর্তন আনল।

সংশোধনের আগে ড্যাপ অনুযায়ী কৃষিজমিতে একতলা ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল। শর্তসাপেক্ষে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবকাঠামো গড়ার অনুমোদনও দেয়া হয়েছিল। তখন যুক্তি ছিল, আবাসন সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকদের নিজস্ব কৃষিজমিতেই বসবাস করতে হয়। সে বিবেচনায় নিজের মালিকানাধীন কৃষিজমিতে সীমিত পরিসরে একতলা ভবন নির্মাণ করে বসবাসের সুযোগ রাখা হয়েছিল।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা অবশ্য শুরু থেকেই এ বিধানের বিরোধিতা করে আসছিলেন। তাদের মতে, ঢাকার আশপাশে যে হারে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে, সেখানে একতলা ভবন নির্মাণের সুযোগও দীর্ঘমেয়াদে জমি রক্ষার ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কৃষিজমিতে রিসোর্ট, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে ওঠার প্রবণতা বাড়তে পারে।

এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত ড্যাপে কৃষিজমিতে কৃষি-সম্পর্কিত কার্যক্রম ছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ড্যাপে চিহ্নিত কৃষিজমিতে আবাসন প্রকল্পের নামে হোক বা ব্যক্তি উদ্যোগে; কোনোভাবেই সেখানে আবাসিক বা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই।’

ড্যাপের মানচিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত এলাকা—কেরানীগঞ্জ, সাভার, রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে এরই মধ্যে অবৈধভাবে বহু আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। আইনি অনুমোদন না থাকলেও এসব প্রকল্পের জমি কেনাবেচা চলছে নিয়মিতভাবে, যা কৃষিজমি সংরক্ষণে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

কাগজে-কলমে যদিও রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কৃষিজমি রয়েছে ৪৪ হাজার ৬৩২ দশমিক ৭৪ হেক্টর, যা মোট জমির ২৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৬২০ দশমিক ২৩, সাভারে ৯ হাজার ৫৫৯ দশমিক শূন্য ৭, গাজীপুরে ১২ হাজার ৯৯ দশমিক ৪৮, নারায়ণগঞ্জে ৬ হাজার ২৮৫ দশমিক ৯৫, রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জে ৮ হাজার ৫৩ দশমিক ২৪ এবং কেরানীগঞ্জে ৮ হাজার ১৪ দশমিক ৭৭ হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। এসব জমি সংরক্ষণে রাজউক সেখানে আর কোনো ধরনের ইমারত নির্মাণের অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।  তিনি বলেন, ‘‌রাজউকের এ সিদ্ধান্ত আরো আগেই নেয়া প্রয়োজন ছিল। তবে সিদ্ধান্তটি যেন আগের অন্যান্য সময়ের মতো আর কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে।’

সংশোধনীতে ড্যাপের আওতাধীন এলাকার কৃষিজমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা ছাড়াও ভবনের উচ্চতা, এলাকার জনঘনত্বের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ড্যাপ প্রণয়নের পর থেকেই আবাসন ব্যবসায়ীরা এটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে একদফা সংশোধন করে সরকার। তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাস্তবায়ন-তদারকি ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধনী সুপারিশ প্রণয়নসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে দেয় সরকার। সে কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশেই শেষ পর্যন্ত ড্যাপে এসব সংশোধনী এসেছে।

সংশোধনীতে দেখা যায়, ড্যাপ সংশোধনের মাধ্যমে ২০ ফুট বা এর বেশি প্রশস্ত সড়কের পাশের আবাসিক ভবনের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর বা ফার) বাড়ানো হয়েছে। যেমন এতদিন ৬ মিটার বা প্রায় ২০ ফুট প্রশস্ত সড়কের ফার ছিল ২ দশমিক ৭৫। এখন সেটি বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২৫ করা হয়েছে। এছাড়া ৯ মিটার ৩০ ফুট প্রশস্ত সড়কের ফার ৩ দশমিক ২৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ করা হয়েছে।

একইভাবে ৬৮টি জনঘনত্ব ব্লকের মধ্যে পুরান ঢাকা, মগবাজার, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, আফতাবনগর-বনশ্রী, রাজাবাজার, শুক্রাবাদ, পান্থপথসহ বিভিন্ন এলাকায় এলাকাভিত্তিক ফার বাড়ানো হয়েছে। এতে অভিজাত এলাকার সঙ্গে এসব এলাকার ভবনের আয়তন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বৈষম্য কমবে।

এদিকে এলাকাভেদে আবাসন ইউনিটের হার মূল ড্যাপ থেকে সামান্য বাড়ানো হয়েছে। এতে কয়েকটি এলাকায় ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়বে। যেমন মূল ড্যাপে পুরান ঢাকায় আবাসন ইউনিটের হার ছিল ১ দশমিক ২। সেটি বাড়িয়ে দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২ দশমিক ৪ করা হয়েছে। এর মানে পুরান ঢাকায় ৫ কাঠা জমিতে ছয়টির পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১২টি ফ্ল্যাট করা যাবে।

BBS cable ad

হাউজিং এর আরও খবর: