শিরোনাম

South east bank ad

সাময়িক স্থানান্তর হবে গাবতলী বাস টার্মিনাল

 প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

সাময়িক স্থানান্তর হবে গাবতলী বাস টার্মিনাল
রাজধানীর অন্যতম বড় বাস টার্মিনাল গাবতলী। এখান থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার বাস চলাচল করে। সাড়ে পাঁচ একরের এ টার্মিনালের উত্তরাংশে মেট্রোরেলের জন্য বানানো হবে ভূগর্ভস্থ স্টেশন, যা নির্মাণের সময় ব্যস্ততম টার্মিনালটি থেকে বাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। এজন্য বাস টার্মিনালটি সাময়িক সময়ের জন্য অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার চিন্তা করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে নতুন বাজার-ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫-এর জন্য গাবতলীতে ভূগর্ভস্থ স্টেশনটি নির্মাণ করতে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এ সময়ের জন্য গাবতলীর বাস টার্মিনালটি আশপাশের ৫০০ মিটারের মধ্যে সরিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এজন্য স্থান নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলমান। তারা জানান, এমআরটি লাইন-৫-এর সম্ভাব্য অ্যালাইনমেন্ট, স্টেশন ও ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সম্পর্কিত বিস্তারিত চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী মে মাসের মধ্যে শেষ হবে। নকশা প্রণয়ন ও অর্থায়ন নিশ্চিতের পর শুরু হবে নির্মাণকাজ। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) প্রস্তাবিত মাস র্যাপিড ট্রানজিট (মেট্রোরেল) বা এমআরটি লাইন-৫-এর জন্য গাবতলী বাস টার্মিনালের উত্তরাংশে ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মিত হবে ওপেন কাট পদ্ধতিতে। পরবর্তীতে টার্মিনালের দক্ষিণাংশেও ভূগর্ভস্থ স্টেশনের সংস্থান রাখতে হবে। বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে গাবতলী হয়ে মিরপুর ১০ পর্যন্ত যাবে এমআরটি লাইন-৫। সেখান থেকে বনানী-গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত যাবে। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার ও নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত লাইনটি যাবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। মাঝে আমিনবাজার থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত যাবে আন্ডারগ্রাউন্ডে। সব মিলে লাইনটির দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এমআরটি লাইন-৫-এর বিস্তারিত সমীক্ষা সম্পর্কিত চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনে গাবতলীতে ভূগর্ভস্থ স্টেশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্টেশনটি পড়েছে টার্মিনালের উত্তরাংশে। গাবতলী দিয়ে এমআরটি-৫ ছাড়াও আরেকটি লাইন যাবে। আশুলিয়া-সাভার-গাবতলী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনটি এমআরটি-২ নামে পরিচিত হবে। এটির আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন হবে গাবতলী বাস টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে। এজন্য দক্ষিণ পাশেও পরবর্তীতে ভুগর্ভস্থ স্টেশনটি সম্প্রসারণের সংস্থান রাখতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহম্মদ বলেন, গাবতলী বাস টার্মিনালের নিচে মেট্রোরেলের ভূগর্ভস্থ স্টেশন হবে। এজন্য সাময়িক সময়ের জন্য গাবতলী বাস টার্মিনাল অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন পড়বে। এজন্য আমরা টার্মিনালের ৫০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করছি। দু-একটি জায়গা আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সবকিছু চূড়ান্ত করার পর টার্মিনালটি নির্বাচিত জায়গায় সাময়িক সময়ের জন্য সরিয়ে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ভূগর্ভস্থ স্টেশনটি নির্মাণ করতে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কাজ শেষ হলে টার্মিনালের অপারেশন আবার আগের জায়গা থেকেই চলবে। জানা গেছে, বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে নতুন বাজার-ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। লাইনটি নির্মাণে ব্যয় হতে পারে ১৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এ অনুযায়ী প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মেট্রোরেলের এ পথটির প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষাসংক্রান্ত চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনের কাজও শেষ। আগামী মে মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পে জাইকা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যৌথভাবে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে। আরএসটিপির প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ঢাকায় মোট পাঁচটি মেট্রোরেল লাইন হবে। এগুলো হলো— উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এমআরটি-১, বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি-৫, আশুলিয়া থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি-২ ও কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে এমআরটি-৪। ২০৩৫ সালের মধ্যে এসব লাইন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে চলছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬-এর নির্মাণকাজ। আটটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে লাইনটি। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এ ডিপো উন্নয়নের কাজ করছে টোক্যু কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এখন পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্যাকেজ-২-এর মাধ্যমে চলছে ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ, যার বাস্তব অগ্রগতি ১০ শতাংশ। প্যাকেজ ৩ ও ৪-এ চলছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ও স্টেশন নির্মাণের কাজ। বাকি প্যাকেজগুলোর কাজও এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। ১৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাইকা ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খামারবাড়ি মোড় থেকে ফার্মগেট পুলিশ বক্স হয়ে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত চলছে বিভিন্ন ভূগর্ভস্থ পরিষেবা স্থানান্তরের কাজ। মিরপুর ১০ থেকে রোকেয়া সরণি হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সড়কটির ঠিক মাঝের অংশে হচ্ছে লাইনটি। প্রকল্পের প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায় স্টেশন ও উড়ালপথ নির্মাণের কাজ চলছে। দুই পাশে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে প্রকল্প এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক আফতাবউদ্দীন তালুকদার। তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
BBS cable ad

ভিন্ন খবর এর আরও খবর: