‘মধ্যম আয়ের দেশ হলেও ওষুধ শিল্পে মেধাস্বত্ব ছাড়’

বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত সদস্য দেশগুলো (এলডিসি) ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধ শিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড় সুবিধা পেয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হলেও এ সুবিধা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন বণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সচিবালয়ে রবিবার ওষুধ শিল্প খাতে মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়ার বিষয়ে অয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘৬ নভেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার (ট্রিপস) কাউন্সিল স্বল্পোন্নত সদস্য দেশগুলো জন্য ১৭ বছর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ মেয়াদ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি পাবে না। পাশাপাশি রফতানি বাজার বাড়বে। আর ওষুধ শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ২৫০টি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৭ শতাংশ পূরণ করে। আর ৩০টির বেশি কোম্পানি ১০৭টি দেশে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ রফতানি করছে।’
তিনি বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের জন্য ৯৭ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে বাংলাদেশ, এটা কম কথা নয়। বাংলাদেশের এমন উত্থানে অনেকের হিংসাত্মক মনোভাব রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন হোক অনেকে এটা চায় না।’
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর ট্রিপসের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অনেকেই ধারণা করেছেন যে, পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদ বাড়বে না। কিন্তু সরকারসহ সকলের প্রচেষ্টায় নতুন মেয়াদ বেড়েছে। ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ট্রিপসের মেয়াদ এতো বছর বাড়ানো হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সুবিধা আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি সকলের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ট্রিপসের মেয়াদ এতো বছর বাড়ানো হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজির (বিএপিআই) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এটা যুগান্তকারী সুবিধা। আমরা কল্পনা করতে পারিনি যে, এতো সময় আমরা পাব। এলডিসি সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এ সুবিধার প্রয়োজন ছিল। এটা না হলে বর্তমান বাজারে যে ওষুধ চার থেকে পাঁচ টাকায় কিনতে হয় তা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় কিনতে হতো। আমাদের দেশের গরীব লোকজনের পক্ষে এটা অসম্ভব হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বল্পোন্নত ৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু ওষুধ বানাতে পারে। তাই ওষুধ শিল্প সম্ভাবনাময়ী খাত। সরকার এ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ওষুধ শিল্প বাংলাদেশের শীর্ষ রফতানির খাত হিসেবে পরিচিতি পাবে।’
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘ওষুধ শিল্প খাতে মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়ার সুবিধা যদি না পাওয়া যেত, তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে বেশি টাকা ব্যয় করে ওষুধ কিনতে হতো। এটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হতো না। বর্তমানে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘সি’ রোগির সংখ্যা ১০ লাখ। ফলে ওষুধের দাম বাড়লে এ সব রোগিরা কী করতেন। তাই আমরা যে সুবিধা পেয়েছি তা অবশ্যই যুগান্তকারী।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০৩৩ সালের পরেও ওষুধ পণ্যের ক্ষেত্রে প্যাটেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানোনো হয়। একই সঙ্গে মেয়াদ বাড়ানোর যৌক্তিক কারণ তুলে ধরে ট্রিপস কাউন্সলের একাধিক সভায় ও দ্বি-পাক্ষিক সভায় আলোচনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেপ্টেম্বরে সল্পোন্নত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতের সাথে সভা করে ট্রিপস চুক্তি বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ সুবিধা পাওয়া গেছে। এটা স্বল্পোন্নত দেশের জন্য দ্বিগুন অর্জন বলে বিবেচিত হয়। এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য উপকারে আসবে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫৯.৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ওষুধ রফতানি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে করেছে ৬৯.২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৭৫ শতাংশ। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭২.৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি হয়। ফলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৯১ শতাংশ।