বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে সংকটে সিরামিক খাত

দেশের সিরামিক খাতে মোট বিনিয়োগের আকার ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে পণ্যটি এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। তা থেকে আয় হচ্ছে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা। তবে চলতি অর্থবছরেও সিরামিক রফতানিতে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারের মন্দার কারণে বর্তমানে সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় এ শিল্প খাতটিকে।
ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও মার্কিন বাজারে শুল্ক প্রতিবন্ধকতাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সিরামিক রফতানিকারকদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে মন্দার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সিরামিক খাত এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট এ চাপ আরও বাড়িয়েছে।
টেবিলওয়্যারের ২০টিসহ দেশের সিরামিক খাতে মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮টি। বাংলাদেশ সিরামিকওয়্যারস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডব্লিউএমএ) উপদেষ্টা ও শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাজেটের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোক্তারা কোনো সুরক্ষা তো পেলই না, বরং আমদানিকে আরও উৎসাহ দিয়ে দেশীয় শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেওয়া হলো।’
তিনি বলেন, সিরামিক খাতে তিনটি উপখাত রয়েছে- টাইলস, স্যানিটারি ও টেবিলওয়্যার। রফতানিতে টেবিলওয়্যার বা তৈজসপত্রের অবদান ৯০ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটের কারণে এ উপখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও সক্ষমতা হারাবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কারণ ফিনিশড পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সিরামিক পণ্য রফতানি থেকে দেশের আয় হয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরে খাতটি থেকে রফতানি আয় কমেছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বিসিডব্লিউএমএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ইউরোপসহ সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। সিরামিক খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল চাহিদা থাকলেও পণ্যের মূল্য নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ইউরোপের অবস্থা ভালো না, যুক্তরাষ্ট্রেরও একই অবস্থা।’
তিনি আরও বলেন, ইউরোপে ব্রেক্সিট হয়ে গেল। গ্রিসের অর্থনীতি দুই বছরেরও বেশি সময় ধুঁকছে। ইতালির অর্থনীতি ভুগছে। ফ্রান্স মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকলেও পর্তুগাল ও স্পেন অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের পণ্য কেনার সক্ষমতা হারিয়েছে। এসব কারণেই দেশের সিরামিক রফতানির গতি শ্লথ হয়েছে।
হুমায়ুন কবির জানান, বাজেট বক্তৃতায় সিরামিক খাতকে অনেক প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ কথা ঠিক না। ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্যের উদ্দেশ্যই হলো অবমূল্যায়িত চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে আন্ডার ইনভয়েসিংকে আরো উত্সাহ দেওয়া হলো।