কৃষকের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘প্রাণ-আরএফএল’ ৪০ বছর ধরে ছুটে চলেছে দেশ থেকে দেশান্তরে

দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে অবসরে গেলেন ‘প্রাণ-আরএফএল’ গ্রুপের প্রাণ মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী। বসে বসে খেলে পেনশনের টাকা শেষ হয়ে যাবে। তারপর? না বসে থাকার উপায় নেই। একটা কিছু করতে হবে। আর সেটা যদি হয় ব্যবসা তাহলে ভাল হয়। কিন্তু ব্যবসা করতে তো টাকার প্রয়োজন। এতো টাকা কোথায় পাবেন তিনি? স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করলেন।
আগপিছু না ভেবেই স্ত্রী তার পৈতৃক সম্পত্তির কাগজ তুলে দিলেন। ওই কাগজ নিয়েই ছুটলেন ব্যাংকে। বন্ধক রেখে নিলেন লোন। ওই টাকা দিয়ে অকশনের কিছু মেশিনপত্র কিনলেন। আর কৃষকের উপকারে লাগে এমন কোন কাজ তিনি করতে চাইলেন। দেশে রয়েছে উর্বরা জমি, প্রচুর নদীনালা এবং প্রচণ্ড পরিশ্রমী বিশাল জনগোষ্ঠী। যারা কৃষক, প্রকৃতির অফুরন্ত দান এসব সম্পদ থাকার পরও আমরা কেন দরিদ্র থাকবো? যেই চিন্তা সেই কাজ। শুরু করলেন কৃষকের জন্য হালকা কৃষি উপকরণ তৈরি। সেটা ছিল ১৯৮০ সাল। দরিদ্রপীড়িত উত্তরাঞ্চলের মানুষকে মাথায় রেখেই বিশুদ্ধ খাবার পানি ও সেচের পানি সরবরাহের যন্ত্রের মাধ্যমেই আরএফএল-এর যাত্রা শুরু। “যতই চাপাচাপি কর কোন লাভ নাই”- আরএফএলের চাপ কলের এ বিজ্ঞাপন মাত করে দেয় গোটা দেশ। হুমড়ি খেয়ে পড়ে আরএফএলের যন্ত্রপাতির দিকে।
আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের। একের পর এক বাজারে আসে খাদ্য, প্লাস্টিক ও পিভিসি পণ্য। সবই দেখে সফলতার মুখ। আর এ সফলতার পেছনে যিনি কলকাঠি নেড়েছেন কিংবা নাড়ছেন তিনি হলেন ‘প্রাণ-আরএফএল’ গ্রুপের প্রাণ মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী।
সেনাবাহিনীতে ২৫ বছর চাকরি করেছেন। সেখান থেকে জীবনের অর্জন অনেক কিছু। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই শুরু করেন পথচলা।
কৃষি উপকরণের পাশাপাশি কৃষিপণ্য উৎপাদন করা যায় কি না এ নিয়ে তিনি ভাবতে লাগলেন। প্রাথমিকভাবে কলা, পেঁপে আর রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করার মাধ্যমে শুরু হয় কৃষিকাজ।
কিন্তু উৎপাদন আশানুরূপ হলেও মওসুম শেষ হবার পর সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর মওসুমের সময় দাম পড়ে যায়। কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তখন মাথায় আসে উৎপাদন করার চেয়ে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রক্রিয়াজাত করাটাই হলো মুখ্য। তখন প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে মানোনিবেশ করেন আমজাদ চৌধুরী।
এর পরে ধীরে ধীরে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাতকরণের কার্যক্রম শুরু করে আরএফএল। কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভিন্ন দেশ থেকে অভিজ্ঞ লোক ফ্যাক্টরিতে আনা হয়। যারা দেশী কর্মীদের সঙ্গে থেকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে থাকলেন। এছাড়া কোম্পানির পক্ষ থেকে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো।
পরে সেসব অভিজ্ঞতার প্রয়োগ শুরু হলো। এ পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে ধীরে ধীরে কোম্পানির উৎপাদনক্ষমতা বাড়তে থাকে। কোম্পানির কাজের পরিধি বাড়তে থাকলো। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনে নেয়া হয় মহাপরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে খাদ্য ও প্লাস্টিক দুই খাতেই সমানভাবে এগোতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
এ দুটি প্রধান খাতে সর্বাধিক বহুমুখী পণ্যের সমাহার রয়েছে ‘প্রাণ-আরএফএল’ গ্রুপে। পাশাপাশি ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যও নিয়ে আসা হয়। দেশের বৃহত্তম খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’ এর প্রোডাক্ট লাইনে রয়েছে ৫০০টির অধিক পণ্য। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্লাস্টিক খাতে ‘আরএফএল’ এর রয়েছে ৩০০০’র অধিক পণ্য।
কৃষিকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সূচনা। কৃষককের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এর নিরন্তর পথচলা। চুক্তিভিত্তিক কৃষিকাজে প্রাণ বাংলাদেশের কৃষিখাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করতে এবং ন্যায্যমূল্য পেতে বাংলাদেশের কৃষকরা সবসময়ই শন্তিতে থাকত।
মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র চাষিদের রক্ষা করতে এবং তাদেরকে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে ‘প্রাণ’। ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ তথা চুক্তিবদ্ধ চাষাবাদের মাধ্যমে চাষিদের উন্নতমানের বীজ, সার-কীটনাশক প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়। সেই সঙ্গে কোন ফসলের জন্য বছরের কোন সময়ে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা সে বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
কৃষকেরা জমিতে উৎপাদন শুরু করলে প্রাণ সেগুলো উৎপাদনে তদারকি করতে থাকে যাতে ভাল ফসল ফলে। এর পরে ফসল ওঠার পরে তাদের কাছে থেকে প্রাণ সেই ফসল কিনে থাকে। এক্ষেত্রে কৃষক প্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে বাজারদর যাচাই করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ‘প্রাণ এর সিংহভাগ কাঁচামাল সংগৃহীত হয় ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ তথা চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে।
প্রাণ এর বিভিন্ন প্রকার জুস, দুগ্ধজাত পণ্য, মসলা ও অন্যান্য পণ্য প্রস্তুত করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে ‘প্রাণ’ এর নিজস্ব চুক্তিবদ্ধ কৃষক ও খামারি ছাড়াও স্থানীয়ভাবে কৃষকদের কাছে থেকেও কাঁচামাল হিসাবে এ সকল পণ্য কেনা হয়। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, তরল দুধ, চাল, মসলা, ডাল, বাদাম, টমেটো ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য।
স্থানীয় বাজার থেকে প্রাণ এই সকল কৃষিপণ্য ক্রয় করার ফলে ৭৮ হাজারের অধিক কৃষক ও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিগণ সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। শুধু ব্যবসার প্রসার করেনি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। নিশ্চিত করেছেন নিজেদের পণ্যের গুণগত মান। এর অংশ হিসাবে তারা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সনদ লাভ করেছে। এগুলো হচ্ছে- আইএসও ৯০০১:২০০৮, আইএসও ২২০০০:২০০৫।
‘প্রাণ-আরএফএল’ ২০০০ সালে প্রথম আইএসও সনদ লাভ করে। এছাড়া প্রাণের সকল পণ্য হালাল সনদ প্রাপ্ত। জাতীয় রপ্তানি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় প্রাণ ১৯৯৯-০০ অর্থবছর থেকে শুরু করে (২০০৫-০৬ বাদ দিয়ে) ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে।
রপ্তানি কার্যক্রমে প্রাণ-আরএফএল বাংলাদেশে যুগান্তকারী সফলতা পেয়েছে। ‘প্রাণ’ স্থানীয় বাজারে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ‘প্রাণ’ এর অর্জন আরও আনেক বেশি। দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে উন্নত বিশ্বের ভোক্তাদের খাবার টেবিলে পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে প্রাণ।
১৯৯৬ সালে ফ্রান্সে ‘প্রাণ’ পণ্য প্রেরণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্বের এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন নেই কিন্তু সেখানে ‘প্রাণ’ বাংলাদেশের পতাকা বহন করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিচিতি বিস্তৃত করতে পেরে ‘প্রাণ’ পরিবার গর্বিত। ‘প্রাণ’ পণ্য সুদূর আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়াও এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১০৬টির বেশি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে।
সমাজকল্যাণে প্রাণ উল্লেখযোগ্য কাজ করে যাচ্ছে। লাভজনক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিপূর্বক মানুষের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘প্রাণ-আরএফএল’ গ্রুপ কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখেই ব্যবসায় অগ্রসর হচ্ছে প্রাণ-আরএফএল।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে কোম্পানিটি। প্রাণ-আরএফএল-এর বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কর্মীদের মধ্যে মহিলা কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে প্রাণ-আরএফএল শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে আসছে।
ডেইরি শিল্পের উন্নয়নে খামারিদেরকে পশুপালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, পশু চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ, রোগপ্রতিষেধক টিকা প্রদান, কৃত্রিম প্রজনন, গবাদি পশুর জন্য উপযুক্ত খাবার সরবরাহ, দুগ্ধখামারিদের সুসংহত করা ও তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে প্রাণ। কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে সার-বীজ সরবরাহ, উন্নত চাষের জন্য প্রশিক্ষণ এবং উৎপন্ন ফসল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিচালনাসহ বেশকিছু স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের টিফিন প্রদান করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে মুলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবন নির্মাণ, আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সংলগ্ন স্থানে মসজিদ ও শ্মশান ঘাট স্থাপনও করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
এছাড়া নরসিংদী জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করে থাকে। ব্যবসায় সফলতার রহস্য সম্পর্কে আমজাদ খান চৌধুরী বলেন, মানুষ সবসময় মনে করে অতীতের কোন কাজ বর্তমানে অন্যভাবে করলে ভাল হতো। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমন কোন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি না।
নতুন নতুন ব্যবসায় ঢুকছে প্রাণ-আরএফএল। গত পাঁচ বছরে অন্যতম বৃহৎ এ শিল্পগোষ্ঠী তাদের ব্যবসার পরিধি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করেছে। খাদ্য ও খাদ্য-বহির্ভূত দু'খাতেই নতুন পণ্য উৎপাদনে গেছে এ গ্রুপ। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দ্রুত প্রসার হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন অনেক পণ্য বাজারে আনা হয়েছে। বিদ্যমান পণ্যের বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে। পণ্য রফতানি ও বাজার বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে মোট পণ্য ছিল ৫০০টি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬০০টি। এ হিসাবে এ সময়ে তিনগুণের বেশি নতুন পণ্য বাজারে ছেড়েছে প্রাণ-আরএফএল।
তিন বছর আগে ভিশন ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক্স পণ্য বাজারে আনে আরএফএল। শুরুর দিকে সংযোজন করলেও এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আগামী মার্চে দেশে তৈরি ভিশন ব্র্যান্ডের টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি শুরু হবে। গত জানুয়ারি মাসে নতুন পণ্য রেইনবো পেইন্টস বাজারে এনেছে আরএফএল। গত বছর থেকে 'রঙ' উৎপাদন হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে পিভিসি পাইপ তৈরি করছে আরএফএল। ফ্যালকন ব্র্যান্ডের নতুন জিআই পাইপ শিগগিরই বাজারে ছাড়বে কোম্পানিটি। আরএফএল টায়ার-টিউবসহ দুরন্ত ব্র্যান্ডের বাইসাইকেল উৎপাদনে গেছে। হবিগঞ্জে গত বছর একটি সাইকেল কারখানা স্থাপন করেছে। বর্তমানে এ বাইসাইকেল রফতানি হচ্ছে। কাঠ, স্টিল ও লেমেনেটেড বোর্ড দিয়ে তৈরি করে রিগ্যাল ব্র্যান্ডের ফার্নিচার বাজারজাত করছে প্রাণ-আরএফএল। গত বছর থেকে দেশে কপার উৎপাদনের মাধ্যমে আবাসিক ও শিল্পের জন্য ব্যবহৃত বিজলি ব্র্যান্ডের কেবল বাজারে এসেছে।
গত বছর গেটওয়েল ব্র্যান্ডের মেডিকেল সরঞ্জাম তৈরি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফোটন ব্র্যান্ডের গাড়ি ও সাউদিয়া ব্র্যান্ডের লুব্রিকেন্ট আমদানি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশের বাজার যাচাই করে এসব পণ্য উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।
সম্প্রতি জীবন্ত মাছ বাজারজাত করছে প্রাণ। সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জে এসব মাছ চাষ করে সরাসরি রাজধানীর বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে ঢাকায় 'তাজা ফিশ' নামে ৫টি আউট লেট চালু করেছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব এলাকায় আউটলেট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মিঠাই ব্র্যান্ডের মিষ্টি বাজারে নিয়ে এসেছে প্রাণ। রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে সারাদেশে মিঠাইয়ের আউটলেট হবে। এ ছাড়া ফাস্টফুডের চেইন স্টোর 'টেস্টি ট্রিট' চালু করেছে প্রাণ। ইতিমধ্যে কোম্পানিটি ১৫টির বেশি চেইন স্টোর করেছে।
২০১৫ সাল থেকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্য সরবরাহ করতে চেইন শপ 'ডেইলি শপ' চালু করে প্রাণ। ইতিমধ্যে এর ৫০টি শাখা চালু হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মধ্যে জুস, স্ন্যাকস, কনফেকশনারি ও ডেইরি পণ্যের মধ্যে অনেক নতুন পণ্য যুক্ত করেছে প্রাণ। গত বছর থেকে হিমায়িত খাদ্য উৎপাদন শুরু করে এখন বাজারজাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া গার্মেন্ট পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য এনেছে প্রাণ। দেশে বিক্রির পাশাপাশি তা রফতানি করছে।
পাঁচ বছর আগে এ গ্রুপের ২৫টি প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খাদ্য ও পল্গাস্টিকের দুটি খাতে সর্বাধিক বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে এ গ্রুপ। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫টি আধুনিক কারখানায় এসব পণ্য উৎপাদিত হয়। বর্তমানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৮৪ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যার মধ্যে ২৫ হাজার নারী। ২০১০ সালে এই গ্রুপে মাত্র ২০ হাজার জনবল ছিল। এ ছাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদনে গ্রুপের হয়ে কাজ করেন এক লাখেরও বেশি চুক্তিভিত্তিক কৃষক। পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত আরও প্রায় ২লাখ জনবল। এভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
রফতানিতে অবদান রাখায় প্রাণ পর পর ১৩ বছর জাতীয় রফতানি ট্রফি অর্জন করেছে। এ ছাড়া পণ্যের গুণগতমান বজায় রাখায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ লাভ করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। বর্তমানে বিশ্বের ১৩৪টি দেশে প্রাণ পণ্য রফতানি হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে ৮৮টি দেশে রফতানি হতো। রফতানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে- বিভিন্ন ফ্রুট ড্রিংক, বেভারেজ, স্ন্যাকস, বিস্কুট, পটেটো ক্র্যাকার, চানাচুর, ঝালমুড়ি, ক্যান্ডি, বাবল গাম, ললিপপ, সস, জেলি, মসলা, সুগন্ধি চাল ইত্যাদি।
আমেরিকার বাজার দখল করে নিচ্ছে প্রাণের পণ্য :
প্রাণের পণ্য বিশ্বের ১৪৩ দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার বাজারে বেশ সুনামের সঙ্গে বাজার দখল করে নিচ্ছে প্রাণের পণ্য। এ পর্যন্ত দেশি বিদেশি অন্তত ৭’শ সুপার মার্কেটে মিলছে প্রাণের পণ্য। কানাডার ওয়ালমার্টে প্রাণের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমেরিকার ওয়ালমার্টে শিগগরই প্রাণের পণ্য দিতে দ্রুত কাজ চলছে। বাংলাদেশ থেকে প্রাণের যেসব পণ্য আমেরিকায় যায় সবগুলো এফডিআই এর ল্যাবে পরীক্ষিত। ল্যাবের ছাড়পত্র নিয়েই পণ্যগুলো আমেরিকাতে বাজারজাত করা হয়। প্রাণের পণ্য বিক্রির দুই হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাসে ৭ থেকে ৮শ দেশি-বিদেশি সুপার মার্কেটে প্রাণের পণ্য সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, প্রাণ বাংলাদেশের মত আমেরিকায়ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করছে। প্রাণের নিউজার্সি অফিসে অন্তত ৩০ জন লোক কাজ করে।