সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ

বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা মাল্টি ফুড লিমিটেড তেল ও কেমিক্যাল পরিবহনে টর্ম কারিনা নামের একটি সমুদ্রগামী জাহাজ কিনেছে। এছাড়া কয়েক মাস আগে এলপিজি গ্যাস পরিবহনে বসুন্ধরা চ্যালেঞ্জার্স নামে একটি জাহাজ কিনেছিল বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড। ২০১৪ সালে বসুন্ধরা-আট নামের একটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার মাধ্যমে সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসায় যাত্রা শুরু করেছিল বসুন্ধরা। নতুন নতুন সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার মাধ্যমে নিজেদের বাহর সমৃদ্ধ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা। আবাসন, সিমেন্ট, এলপিজি, কাগজ, জাহাজ নির্মাণ, এভিয়েশন, রিফাইনারি, খাদ্যপণ্য ও সেবা খাতে একাধিক বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান রয়েছে গ্রুপটির। এর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী বসুন্ধরা মাল্টি ফুড লিমিটেড নামের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তেল ও কেমিক্যাল পরিবহনে টর্ম কারিনা নামের একটি সমুদ্রগামী জাহাজ কিনেছে। ২০০৩ সালে নির্মাণকৃত ডাবল হালের জাহাজটি ডেনমার্কের পতাকাবাহী। আর কোপেনহেগেন পোর্টে নিবন্ধনকৃত জলযানটির ধারণক্ষমতা ৫৪ হাজার ৬৪৫ সিবিএম। জ্বালানি তেল ও কেমিক্যাল পরিবহনকারী জাহাজটি হবে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন তৃতীয় সমুদ্রগামী জাহাজ। এরইমধ্যে গ্রুপটি জাহাজটির বাংলাদেশে নিবন্ধন নেয়ার জন্য প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর নিবন্ধন পেলে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটির নাম হবে বসুন্ধরা মালিকা।
নৌ বাণিজ্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডেনমার্কের পতাকাবাহী ৫৪ হাজার ৬৪৫ সিবিএম ধারণক্ষমতার অয়েল অ্যান্ড কেমিক্যাল পরিবহনে সক্ষম জাহাজ কিনতে যাচ্ছে বসুন্ধরা মাল্টি ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেড। ২০০৩ সালে নির্মাণ করা টর্ম কারিনা জাহাজটির বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টর্ম। বসুন্ধরা জাহাজটির নামকরণ করছে বসুন্ধরা মালিকা। তাদের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে কিছু দিনের মধ্যে জাহাজটি বাংলাদেশে আসবে। আর এটিসহ দেশে সমুদ্রগামী অয়েল ট্যাংকারের সংখ্যা হবে আটটি। অন্য অয়ের ট্যাংকারগুলো হলোÑ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের তিনটি, মেঘনা গ্রুপের দুটি, ওরিয়ন গ্রুপের দুটি এবং ইস্ট কোস্ট গ্রুপের একটি।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ হাজার টনের বেশি ওজনের জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা নিয়ে গত বছর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সমুদ্রগামী জাহাজ নিবন্ধিত হয়েছে। সরকার যদি আরও কিছু সুবিধা দেয়, তাহলে আরও জাহাজ বহরে যুক্ত হবে। সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে প্রতি বছর সাত বিলিয়ন ডলার মুদ্রা বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো নিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে এ খাতে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নৌ-বাণিজ্য অফিসের প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তেল ও কেমিক্যাল পরিবহনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ সমুদ্রগামী একটি ট্যাংকার কিনেছে। ডেনমার্কের পতাকাবাহী জাহাজটি কেনার জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর এটি দেশে এলেও চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে না। কয়েক মাস আগে বসুন্ধরা চ্যালেঞ্জার্স নামে এলপিজি পরিবহনে আরেকটি সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানি করেছিল।
তিনি আরও বলেন, এখন সমুদ্রে পণ্য পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেড়েছে। এ খাতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন। সর্বশেষ গত ২৪ ও ২৫ মার্চ সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন কর্ণফুলী গ্রুপের দুটি কনটেইনার জাহাজ যুক্ত হয়েছে দেশের বহরে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৬৫টি।
উল্লেখ, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত শিপিং খাতের কোম্পানি টর্ম। প্রতিষ্ঠানটির বহরে থাকা ৪৬টি অয়েল ট্যাংকার মূলত জ্বালানি তেল পরিবহন করে।