দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠা করেছে ইওন গ্রুপ

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠা করেছে ইওন গ্রুপ।
অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই খামারে পাস্তুরিত দুধের পাশাপাশি ঘি, দই এবং আইসক্রিমের মতো অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য উত্পাদন করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম শনিবার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই খামারের উদ্বোধন করেন।
এই খামারের পণ্য ‘বারাকাহ’ নামে বাজারজাত করা হবে।
২০১৯ সালের শেষের দিকে বদরগঞ্জের সন্তোষপুর গ্রামের ৫০ একর জমিতে এই দুগ্ধ খামারটি নির্মাণ করা হয়।
একই বছর অস্ট্রেলিয়া থেকে ২২৫টি হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরু আমদানি করেছিল ইওন গ্রুপ। গরুগুলো এখন এই খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই খামারে দুধ উৎপাদন শুরু হয়েছে।
বেশ কয়েকটি বড় শেডে গরুগুলোকে লিঙ্গ এবং বয়স ভেদে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এই খামারের দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টে কাজ করছেন ৪৫ জন।
খামারের উপদেষ্টা ডা. একেএম সিরাজুল হক জানান, গাভীর দুধ দোয়ানো থেকে শুরু করে দুধের প্যাকেজিং পর্যন্ত সব কাজ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই প্রক্রিয়াটিতে কোনোভাবেই হাতের ব্যবহার করছি না। নিয়ন্ত্রিত মেশিনে নিরাপদ দুধ উৎপাদনের সব কাজ করা হয়।’
এ ছাড়া, প্রতিটি গাভীর স্বাস্থ্য, খাবার গ্রহণ, ওষুধ প্রয়োগ ও প্রজনন পর্যবেক্ষণের জন্য আইওটি সেন্সর স্থাপন করা হয়েছে খামারে।
গরু রাখার শেডগুলোর ডিজাইন করা হয়েছে সুইডিশ মডেলে। সিরাজুল হক বলেন, ‘এই শেডগুলোতে গরু বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং শেড আরামদায়ক হলে দুধের উৎপাদন বেশি হবে।’
নেদারল্যান্ডসের একজন দুগ্ধ খামার বিশেষজ্ঞকেও এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ফার্মের প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট দুধ থেকে ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক এবং আফলাটোক্সিন আলাদা করতে সক্ষম। এই দুধগুলো বাজারে ৫০০ মিলিলিটার এবং ১০০০ মিলিলিটারের প্যাকে পাওয়া যাবে।
সিরাজুল হক আরও বলেন, ‘আমরা শিগগির গুড়া দুধ বাজারজাত করবো।’
বর্তমানে এই খামারের দৈনিক উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দুই হাজার লিটার। তবে, প্রতিদিন ১০ হাজার লিটার দুধ উত্পাদনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তারা।
ইওন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিন উদ দৌলা এই খামারকে দুগ্ধ চাষের বিপ্লব আনার প্রস্তুতি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
দেশে প্রতি বছর দুধ, বিশেষ করে গুঁড়ো দুধ, আমদানি করতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সারাদেশে উদ্যোক্তারা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে বাংলাদেশ একটি দুধ রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে। এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করা সম্ভব।
গত কয়েক বছরে দেশে বার্ষিক দুধের উত্পাদন ১০ গুণ বেড়েছে। সারা দেশে প্রায় ১৫ লাখ দুগ্ধ খামার রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ছয়টি বৃহৎ পরিসরের খামার বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার।
তিনি বলেন, ‘দেশে মাথাপিছু দুধের ব্যবহার চার দশমিক পাঁচ মিলিলিটার বেড়ে ১৭৫ মিলিলিটার হয়েছে। এ ধরনের বড় খামারের উদ্যোগ স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।’