সোমবার কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের আনাগোনা কম হওয়ায় অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
অবস্থা কেমন- জানতে চাইলে গাবতলী হাটে পাবনার আলীম বেপারী বলেন, “এখনও তেমনভাবে জমেনি। ক্রেতা কম। তবে আগামী দুই তিন-দিন বিক্রি হবে।”
পাবনার চাটমোহর থেকে আটটি দেশি প্রজাতির গরু নিয়ে এসেছেন আলীম। এর মধ্যে তিনটির দাম হাঁকছেন ছয় লাখ টাকা করে।
সিরাজগঞ্জের বেপারী মো. রঞ্জু আহমেদ একটি উলবাড়িয়া ও তিনটি খ্যাপা জাতের গরু নিয়ে এসেছেন। উলবাড়িয়ার দাম চাইছেন ১২ লাখ টাকা, আর খ্যাপাগুলো ছয় থেকে নয় লাখ টাকা করে।
ক্রেতারা দাম বলেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও বলেনি। বাজার জমলে হয়ত ভালো দামে বিক্রি করা যাবে।”
এর মধ্যেও দুই-একজনকে দেখা গেল পছন্দের গরু নিয়ে ঘরে ফিরতে।
এদের একজন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মো. মানিক ১ লাখ ১২ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু কেনেন।
“কিনতে তো হবেই, পছন্দ হল, তাই কিনে ফেললাম, বলেন তিনি।
কুষ্টিয়া থেকে গাবতলীতে আসা বেপারী নাদের আলী মেম্বার বলেন, “হাট জমবে কাল থেকে। ঢাকার মানুষরা একটু দেরি করেই গরু কেনেন, কারণ এখানে রাখার জায়গা নেই।”নাদের আলীর খোঁয়াড়ে রয়েছে ছয়টি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। এর মধ্যে একটির দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
এছাড়াও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ব্যবসায়ীও ভিড় করতে শুরু করেছেন গাবতলী হাটে।
কুষ্টিয়া থেকে আসা কালাম এনেছেন তিনটি ছোট গরু। এগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা।
ঝিনাইদহ থেকে ৮টি গরু এনেছেন লালু বেপারী। তার গরুগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
এদিকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি মৈত্রী সংঘের মাঠে ঢোকার আগে ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রিকশার ভিড়, মানুষের জটলা।
কলোনির হলুদ রংঙের বাড়ির সামনে রাখা আছে মাঝারি আকৃতির শতাধিক গরু। রাস্তার পাশে অল্প জায়গা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পশু নিয়ে বসে আছেন কিছু ব্যবসায়ী।
কোরবানির হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান বাবুল বলেন, “বৃষ্টির কারণে হাটে কাদা জমায় সীমানার বাইরে শুকনো জায়গায় কিছু গরু রাখার সাময়িক ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
তবে শাহজাহানপুর থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, “হাটের সীমানার বাইরে কোনো গরু কোথাও রাখা নেই। হাট ও আশে পাশের এলাকায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।”
হাটের প্রবেশ মুখে ডানদিকে চুয়াডাঙ্গার আলফাডাঙ্গার ব্যবসায়ী ইসারত আলীর দেখা মেলে। হাট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর কয়েকদিন আগেই ঢাকায় এসেছেন তিনি।“স্যার, এইখানে যেই গরু পাইবেন গাবতলী বা অন্য কোনো পশুর হাটে তার দাম অনেক বেশি। এই হাটে অল্প গরু নিয়া আমরা আসছি। বিক্রি হইলেই বাড়ি ফিরা যাইতে চাই।” বলেন ইসারত।
চুয়াডাঙ্গা খেকে তার আনা গরুগুলোর মধ্যে কম দামের গরুটি দেড় লাখ টাকা।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে আসা বেপারী মো. তুষার বলেন, “মানুষ কেমন গরু চাইছে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। ধারণা করি-তারা যেহেতু গরুকে বাসায় রাখে না, এক মুঠো ঘাসও খাওয়াবে না, তাই হয়ত ঈদের আগের রাতেই গরু কিনতে হাটে আসবে।”
কুষ্টিয়ার মনোহরদী ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া এলাকা থেকে চার দিন আগে ৬০টি গরু নিয়ে আসা রিপন আলী এবার ভালো লাভের আশা করছেন।
এইবার ঈদে ভারত থেকে কোনো গরু আসবে না বলে তার কাছে খবর আছে দাবি করে তিনি বলেন, “ওই খান (ভারত) থেকে গরু না আসলে দেশি গরু ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। তা নাহলে অল্প লাভে গরু বিক্রি করেই বাড়ি ফিরতে হবে।”
‘আকর্ষণ উট’
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ও আকারের গরু, ছাগলের পাশাপাশি গাবতলী পশুর হাটে দেখা গেছে ভারতের রাজস্থান থেকে আসা কয়েকটি উট।
উটগুলোর দেখা-শোনায় থাকা ইমরান হোসেন বলেন, “এ উটগুলোর দাম ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে। শুক্রবার তিনটি বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলোও বিক্রি হবে এমন আশায় রয়েছি।”উটগুলো রাজস্থান থেকে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সচরাচর এ পশুটির দেখা না মেলার কারণে অনেক উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন উট দেখতে। কয়েকজন স্কুলের শিশুকেও উট নেড়েচেড়ে দেখতে দেখা গেছে। কয়েকজনকে দেখা গেছে উটের সঙ্গে সেলফি তুলতে।