শিরোনাম

South east bank ad

চার বছর অধ্যক্ষ শূন্য পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা

 প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা):

বরগুনা জেলাধীন পাথরঘাটা উপজেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় প্রায় চার বছর ধরে অধ্যক্ষ পদটি শূন্য রয়েছে।

আলহাজ্ব মৌঃ মন্সুর আহম্মদ কাজি মাদ্রাসাটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ বছরের শিক্ষাঙ্গনটি আজ অধ্যক্ষ শূন্য রয়েছে। মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতার কারণে তিন বছরের অধিক সময় ধরেও মাদ্রাসাটিতে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।

মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে- গত ১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদটি শূন্য হয়। এরপরই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক ওই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে ১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ পদে আবেদন করায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। পরদিন মাদ্রাসাটির আরেকজন সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আফজাল হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তিনি ২০ সালের জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে অধ্যক্ষ পদটি ছেড়ে না দিলেও ঠুনকো অজুহাতে কমিটি ও মাদ্রাসাটির বর্তমানে দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামের যোগসাজশে জোরপূর্বক পদ থেকে সরিয়ে নিজের ক্ষমতা দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যিনি সর্বশেষ মাদ্রাসাটির জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করে বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ সাইফুল ইসলামের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষ পদটি শূণ্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি আমার তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি পদটিতে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার জন্য। ১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখে প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এতে প্রার্থী হিসেবে বরগুনা সদর উপজেলার চরকগাছিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান একটি আবেদন করেন। তাকে সহ মোট ৮ টি আবেদন জমা পড়ে পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়।

এতে প্রার্থী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি সহ নানাবিদ অভিযোগ এনে তার আবেদন বাতিল করা হয়। মিজানুর রহমান বাতিলকৃত আবেদনের সূত্র টেনে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২১ সালের মার্চের ৩ তারিখে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাইফুল ইসলামকে এডমিট কার্ড দেয়ার নির্দেশ দেয়।

তবে প্রথমবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ ছয় মাসের মধ্যেই শেষ হলে ২০ সালের নভেম্বরের ২০ তারিখে দ্বিতীয়বারের মতো আবারো মাদ্রাসাটিতে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ২১ সালের মার্চের ১৭ তারিখ করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হওয়ায় অধ্যক্ষ পদটিতে শেষ পর্যন্ত আর জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। ২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে মাদ্রাসা খুললেও ওই বছরের জুন মাসের ৩০ তারিখে মাদ্রাসাটির অধিভুক্ত মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। ফলে বছরটির অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ অধিভুক্ত পাওয়ার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আবেদন করেন।

অধিভুক্ত পাওয়ার পরপরই আবারো পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শূন্য অধ্যক্ষ পদটিতে নিয়োগের জন্য কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন বর্তমান অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা মাওলানা মোঃ সাইফুল ইসলাম।

অন্যদিকে, এই প্রতিবেদকের হাতে আসে মাদ্রাসার কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাদ্রাসাটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) বরাবর তিনটি দরখাস্ত।

মূলত এই দরখাস্তের সূত্র ধরে মাদ্রাসাটিতে গিয়ে জানা গেছে অধ্যক্ষ পথটি প্রায় চার বছর ধরে শূন্য রয়েছে।

দরখাস্ত দুটিতে বলা হয়েছে- অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ চুরির প্রসঙ্গ। আরেকটিতে বলা হয়েছে অন্যায় ভাবে বেতন টাকা আদায় প্রসঙ্গে।

দরখাস্ত দুটি পড়ে জানা গেছে- করোনাকালীন সময়ে সরকার বেতন ভাতা গ্রহণ না করতে। তবুও ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বেতন উত্তোলন করছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সেইসাথে টাকা দিতে না পারা অনেক শিক্ষার্থীরাই পরীক্ষা দিতে পারেনি বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ আনা হয়।

তবে এবার এই দুর্নীতির বিষয়ে মাদ্রাসাটির বর্তমান অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা মাওলানা মোঃ সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় শাখা কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ২১ সালের ১৭ জানুয়ারি উপসচিব মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি দেখান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত ২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে তবে শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

কোভিড-১৯ এর প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে আবশ্যিকভাবে অর্থ ব্যয় করতে হয়। তবে অভিভাবকদের আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা পূর্বক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (এমপিও/নন-এমপিও) এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (এমপিও/নন-এমপিও) শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে শুধু টিউশন ফি আদায় করবে। টিউশন ফি ব্যতীত অন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় টিউশন ফি ব্যতীত অন্য কোনো ফি আদায় করা হলে তা পরবর্তীতে টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে।

যদি কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে পতিত হন, তাহলে তার সন্তানের টিউশন ফি মওকুফ করার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন। উল্লেখ্য, কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন কোনো কারণে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে যত্নশীল হতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পূর্বের ন্যায় টিউশন ফি সহ অন্যান্য ফি আদায় করা যাবে।

তবে টিউশন ফি ব্যতীত টাকা উত্তোলন করেছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন বেনামী এই অভিযোগকৃত আবেদন তিনটিতে।

পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক (বাংলা) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন- অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে বিধিমতে উপাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হলে মাদ্রাসা উপাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক অধ্যক্ষ পদে আবেদন করে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে আমি আফজাল হোসেন পাই। কিন্তু পরবর্তীতে মিটিং এর মাধ্যমে আমাকে অবৈধভাবে আমার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে সরিয়ে দেন। যার সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। এটি কমিটির যোগসাজশে হয়েছে বলে আমার দাবি। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (পাথরঘাটা) একটি মামলা দায়ের করি। মামলা নম্বর ৩৭৭/২১। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা বরাবরে তদন্তের জন্য একটি আবেদন করি। পরে তদন্তপূর্বক আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চার্জ দেয়ার জন্য বলা হলেও তা আমাকে এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে একজন পদপ্রার্থী মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আমি অধ্যক্ষ পদে আবেদন করলে নানা ধরনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আমার আবেদনটি বাতিল করেন মাদ্রাসা কমিটি। এ বিষয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছি। যা তদন্তপূর্বক আমাকে নিয়োগের এডমিট কার্ড দিতে বলল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করেন।

অপরদিকে, পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মিজানুর রহমানের অধ্যক্ষ পদে দরখাস্ত বাতিল বিধিবহির্ভূত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা নিয়োগ বোর্ড গঠন সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার শিশির কুমার বড়াল। তিনি গত বছরের ১৬ মার্চ পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহি অফিসার কে সংযুক্ত করে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়েছে মাদ্রাসার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় আব্দুর রাজ্জাক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মোঃ আফজাল হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গভর্নিং বোর্ডের সভায় স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকায় গভর্নিং বডি পরবর্তী জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে। কিন্তু মোহাম্মদ আফজাল হোসেনকে কোনরূপ কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান বা ব্যতিরেকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম চলাকালীন অত্যন্ত তাড়াহুড়ার সাথে আসছে প্রক্রিয়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব রদবদল সমীচীন নয়। একই সাথে সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটির প্রধান শিশির কুমার বড়াল মোঃ আফজাল হোসেন সংশ্লিষ্ট পদে এমপিও ভুক্তির তারিখ বিবেচনায় জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে অপসারণ করা হয়নি, তাই তাকে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ সাইফুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পরে এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন। তবে পরক্ষনেই তিনি বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয় অস্বীকার করে গ্রহীত টাকা মাদ্রাসার কাজে ব্যয়ের পরে মাদ্রাসার সাধারণ তহবিলে জমা রেখেছেন বলে জানান তিনি।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: