ছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করার মামলা
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার বহুল আলোচিত মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
গত ১০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় তুফান সরকার বগুড়া জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। প্রায় সাড়ে চার বছর পর তিনি জামিনে মুক্ত হলেন।
এর আগে একাধিক মামলায় জামিন হলেও ভিন্ন মামলায় শোনএরেষ্ট থাকার কারণে তার মুক্তির পথ রুদ্ধ ছিল।
বগুড়া জেলা কারাগারের জেলার মহিউদ্দিন হায়দার জানান, ১০ জানুয়ারি তুফান সরকারের জামিনের কাগজপত্র বগুড়া কারাগারে এসে পৌঁছে। এরপর সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কারাগার থেকে সে মুক্তি পায়।
আলোচিত এই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, তুফান সরকারের জামিন হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কারাগার থেকে বের হয়েছে কিনা এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
তুফান সরকারের বড় ভাই বগুড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সরকার বলেন, তুফানের জামিনের পর সে বাড়িতে রয়েছে। তার সঙ্গে অনেক অন্যায় করা হয়েছে। যার কারণে অনেক দেরিতে হলেও আদালত তাকে জামিন দিয়েছে। তারা বরাবরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। দায়ের করা অভিযোগগুলো তদন্ত করে আদালত যা রায় দিবে সেটাই তারা মেনে নিবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে মোট আটটি মামলা চলমান ছিলো।
এরমধ্যে আলোচিত ছাত্রী ধর্ষণ এবং ওই মেয়ে ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার মামলাটি বাদী পক্ষ আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ মামলা দায়ের করার অভিযোগ এনে এফিডেফিট করে। এর কারণে অনেক আগেই আলোচিত এই মামলাটিতে তুফান সরকারের জামিন হয়ে যায়। এরপরও ভিন্ন মামলা থাকার কারণে সে দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর ধরে কারাগার থেকে বের হতে পারেনি। সর্বশেষ মানিলন্ডারিং আইনে দায়ের করা একটি মামলায় শুনানি শেষে হাইকোর্ট থেকে গত ৫ জানুয়ারি তুফান সরকারের জামিন হয়। এরপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত নথিপত্র গত ১০ জানুয়ারি বগুড়া কারাগারে এসে পৌঁছে। ওই দিনই মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হয় তুফান সরকার। এর আগে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই সদর থানার দায়ের করা মামলার আসামী হিসেবে কারাগারে প্রবেশ করেছিলো সে।
২০১৭ সালের ২৮ জুলাই তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে বগুড়া সদর থানায় প্রথম ামলা করেন শিক্ষার্থীর মা।
মামলায় বলা হয়, ভালো কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার কথা বলে তুফান মোবাইলে ওই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই নিজ বাড়িতে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন তিনি। এ ঘটনার জেরে ওই বছরের ২৮ জুলাই ওই মেয়ে ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেন তুফানের স্ত্রী। করা হয় মারধরও।
ছাত্রীকে ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই দুটি মামলা করেন নির্যাতিত মেয়েটির মা। দুই মামলাতেই তুফান সরকার প্রধান আসামি।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলার তদন্ত শেষে প্রধান আসামি তুফান সরকারসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন তুফানের স্ত্রী তাছমিন রহমান ওরফে আশা, আশার বড় বোন পৌরসভার নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি, আশার মা লাভলী রহমান ওরফে রুমি, তুফানের সহযোগী আতিকুর রহমান ওরফে আতিক, মুন্না, আলী আযম দীপু, মেহেদী হাসান ওরফে রুপম, সামিউল হক ওরফে শিমুল ও এমারত আলম খান ওরফে জিতু।
প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান ওরফে রুনু ও নাপিত জীবন রবিদাস ওরফে যতিনকে।
অন্যদিকে ছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার মামলায় তুফানসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তুফানসহ ১০ জন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাতেও অভিযুক্ত। বাকি তিন অভিযুক্ত হলেন, তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান, নাপিত জীবন রবিদাস ও বাদুড়তলা এলাকার আনজুয়ারা বেগম। তুফান সরকার ছাড়া অন্যরা আগে থেকে দুই মামলাতেই জামিনে রয়েছেন।